ক্রিস্টোফার কলম্বাসকে শুধু একজন সাহসী অ্যাডভেঞ্চারার ও সফল নাবিক হিসেবে দেখার আর উপায় নেই।
এই খ্যাতিমান নাবিকের লম্বা সাফল্যের লিস্টের তলায় চাপা পরে আছে নিরীহ ও সরল আদিবাসীদের আর্তনাদ, বলছেন কোন কোন ইতিহাসবিদ। সেই আর্তনাদের তোড়ে প্রশ্ন উঠেছে তাকে করা অতীতের মূল্যায়ন নিয়ে। তিনি কি একজন সাহসী অনুসন্ধানকারী নাবিক ছিলেন নাকি আসলে ছিলেন লোভী আক্রমণকারী? নাকি একজন বেপরোয়া অ্যাডভেঞ্চারার ও বর্বর শাসক ছিলেন তিনি?
কলম্বাসের ব্যক্তিগত ডায়রি, সমুদ্র অভিযানের লগবই এবং তার সমসাময়িক নাবিকদের ডায়রি ও চিঠি সাক্ষ্য দিচ্ছে যে তিনি তার প্রথম সাগর অভিযানে বাহামা, কিউবা, হাইতি এবং ডোমিনিকান প্রজাতন্ত্রের মধ্যে কোন এক সমুদ্রতীরে পৌঁছান এবং প্রথম দিন থেকেই স্থানীয় আদিবাসীদের মধ্যে থেকে নিজের জন্য ব্যক্তিগত চাকর বানাতে শুরু করেন।
বাহামা, কিউবা, হাইতি এবং ডোমিনিকান প্রজাতন্ত্রে তখন বাস ছিল টাইনো আদিবাসীদের। কলম্বাস লক্ষ্য করেন এরা অলংকার পরে। তিনি ধারনা করেন এখানে সোনাদানা রয়েছে। তার দলের কিছু মানুষ রেখে তিনি স্পেনে ফিরে যান। স্পেনের রাজা-রানীকে জানান, তিনি এশিয়া পৌঁছেছেন ও চীনের একটি দ্বীপে ঘাঁটি বেধেছেন যেখানে অনেক স্বর্ণ ও মসলা রয়েছে। রাজা-রানীকে বোঝান তার আরো বড় দল নিয়ে সেখানে যাওয়া প্রয়োজন। স্পেনের রাজা তাকে সেইসব দ্বীপপুঞ্জের ভাইসরয় হিসাবে নিযোগ দেন এবং ১৭টি জাহাজ ও ১,২০০ লোক দেন স্বর্ণ ও মসলা নিয়ে আসার জন্য। কলম্বাস এদের নিয়ে টাইনো আদিবাসীদের উপর শুরু করেন নির্মমতা। আদেশ দেন সাবালক সবাইকে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ স্বর্ণ তিন মাস পরপর জমা দিতে হবে। কয়েক হাজার টাইনো আদিবাসীদের তিনি জাহাজে করে স্পেনে বিক্রি করতে পাঠান। ব্রিটিশ ইতিহাসবিদ বাসিল ডেভিডসন কলম্বাসকে "দাস ব্যবসায়ের জনক" হিসাবে অভিহিত করেছেন। যারা পালানোর চেষ্টা করে তাদেরকে হিংস্র কুকুর দিয়ে খুঁজে বের করে আনা হয়।
সেসময় কলম্বাস ও তার ভাইদের আদেশে সামান্য অপরাধে হাত কেটে ফেলা হতো টাইনোদের। বিদ্রোহ করলে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে অথবা আগুনে পুড়িয়ে মারা হতো। অনেকে কলম্বাসের কাছ থেকে বাঁচবার জন্য আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। আরও অনেকে মারা যায় স্পেনিশদের আনা রোগ থেকে।
ষাট বছরের মধ্যে এইসব দ্বীপের জনসংখ্যা আড়াইলাখ থেকে চৌদ্দ হাজারে নেমে আসে।
এসবের কাছে ক্রিস্টোফার কলম্বাসের সাহসী অ্যাডভেঞ্চারের খ্যাতি ম্লান হয়ে যায়। লোভী আক্রমণকারী ও বর্বর শাসকের পরিচয় প্রধান হয়ে উঠে।
Comments