Win-win situation নিয়ে আলোচনা করার সময় ইকবাল সিদ্দিকী ভাই চে গুয়েভারার মৃত্যুর কথাটা তোলেন।
আমি একমত হই না কিন্তু দ্বিমতও পোষণ করতে পারি না।
তিনি বলেন, 'ক্যাপিটালিস্ট রেজিম তারে গুলি কইরা হত্যা করবার পর তারই ছবি টি-শার্টের সামনে এবং পিছে ছাপাইয়া কোটি কোটি পিস বিক্রি করছে ওই বিপ্লবী চেতনাধারীগো কাছেই, কামাইছে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার। পুরা বিশ্বব্যাপী। ক্যাপিটালিস্টগো কাসে চে গুয়েভারার মৃত্যু উইন উইন সিচুয়েশন। বিপ্লবীরেও খতম করসে, আবার সেই মৃত্যুরে ব্যবহার কইরা টাকা কামাইসে।
আমি মন্তব্য করলে, 'যে ক্যাপিটালিস্ট মারসে আর যে ক্যাপিটালিস্ট টি-শার্ট বিক্রি করসে তারা তো এক না,' তিনি বলেন 'শোন, তুই যেমন মনে করস কারো জন্য ভালো করলে সেই ভালোটা তোর কাছে ফেরত আসবো, সেই একই তত্ত্বে ক্যাপিটালিস্টরা জানে একদিকে কামড়াইলে অন্যদিকে ঘর ভোরবো ডলারে। কিন্তু কথা সেইটা না, কথা হইল চে গুয়েভারার মৃত্যুরে তারা একটা 'বিজনেস কেইস' হিসেবে দাঁড়া করাইতে পারসে। এবং সেটা সাকসেসফুলি।
একটা সামান্য পজ দিয়া ইকবাল সিদ্দিকী ভাই প্রশ্ন ছুইড়া দেন, যেটার সদুত্তর উত্তর আমার কাছে নাই, 'বলতো, বিপ্লবীর মৃত্যুরে বিজনেস কেইস বানানো 'আর্ট' নাকি 'সাইন্স'?'
আমি তাও বলি, মানুষ প্রতিভার মুল্য বুঝলে, হৃদয়ের ভাষা বুঝলে আর্টস আর না বুঝলে সাইন্স।
প্রসঙ্গক্রমে রবীন্দ্রনাথের ছবি নজরুলের জন্মবার্ষিকীতে ব্যবহার করার বিষয় আলোচনায় আসে। এই কিসুদিন আগে দেশের এক স্বনামধন্য ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠান বিদ্রোহী কবির জন্মবার্ষিকীতে এক আবেগঘন পোস্ট দিসে কিন্তু ছবি ব্যবহার করসে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের। এবং তোপের মুখে পড়ছে। নজরুলের নাতনি খিলখিল কাজী রাইগা মামলা কইরা দিবেন বলসেন।
আমি বলি, প্রতিষ্ঠানটি অফিসিয়াল বিবৃতি দিয়া ক্ষমা চাইসে। তিন্তুক তারা যদি তাদের কোন একটা প্রোডাক্টের নাম বিদ্রোহী কবির নামে নামকরন কইরা ফালাইত তাতে কনসুমার সেন্টিমেন্ট তাদের দিকে ঘুইরা যাবার সম্ভাবনা থাকতো। কবির পরিবার রয়্যালটি পাইত, দেশ পাইত নজরুলের ব্রেন্ডিং। হইত উইন উইন সিচুয়েশন।
ইকবাল সিদ্দিকী ভাই অন্য পথে কথা বাড়ান। বলেন রবীন্দ্রনাথ এবং নজরুল কি এই যুগে অপ্রাসঙ্গিক হইয়া যাইতেসেন কিনা সেইটা বড় ভাবনা। কোন বাংলাদেশী ব্যবসা প্রতিষ্ঠানরে তো কোনদিন দেখলাম না এদের ব্র্যান্ড ইমেজ ব্যবহার করতে। এই দুইজনের থিকা কি কোন বড় সেলেব্রেটি এন্ডরস্মেন্ট হয়? এদের থিকা বড় রকস্টার কি এই জমিতে হাটসে?
আমি ইকবাল সিদ্দিকী ভাইরে সরণ করায়ে দেই যে রকস্টারের ইমেজ পাল্টায়। বলি, আপনের চোখে রকস্টার আজম খান কারণ আপনে তার আগুনঝরা পারফরমেন্স স্টেজে দেখসেন। আমি আজম খানরে পাই নাই, আমার কাসে তিনি কিছুটা অপ্রাসঙ্গিক। আমি বড় হইসি মাক্সুদের সময়। আমার চোখে মাক্সুদই সর্বশ্রেষ্ঠ স্টেজ পারফর্মার। আবার আমার পরের জেনারেশনের চোখে আর্টসেল সর্বশ্রেষ্ঠ স্টেজ পারফর্মার।
ইকবাল সিদ্দিকী ভাই জানান তিনি তিনটা ব্যান্ডই স্টেজে দেখসেন এবং মনে করেন আজম খানরে কেউ ছাপায়া যাইতে পারে নাই। এরপর জিজ্ঞেস করেন তোর মাকসুদ কেন এক যুগের বেশী সময় হইয়া গেল বাজারে গান ছাড়ে না? আমি বলি বাজার তো মাকসুদের গানের জন্য তৈরি না; বাজার চায় বিজনেস কেইস বানাইতে। উইন উইন সিচুয়েশন হয় না বইলা তিনি মনেহয় আর গান বাঁধবার স্পৃহা পান না।
ইকবাল সিদ্দিকী বলেন, হুম ঠিকই কইসোশ মনেহয়, মানুষ প্রতিভার মুল্য না বুঝলে, হৃদয়ের ভাষা না বুঝলে আজম খান, মাকসুদ, আর্টসেল গান বাঁধবো কেন! তাতে অবশ্য তাগো কোন লস নাই। লস আমাগো।
Comments