শাহজাদা শাহ সুজার শেষ পরিণতি ও মৃত্যু নিয়ে ধোঁয়াশা আছে, এটা প্রথম শুনি দিল্লীতে বসে। ২০১৮ এর ডিসেম্বরে, আব্বার অপারেশনের সময়। গিয়েছিলাম সম্রাট হুমায়ুনের সমাধি দেখতে। এক টুরিস্ট এর সাথে পরিচয়। এসেছেন পর্তুগাল থেকে। তিনিই বললেন সম্রাট শাহজাহানের সব ছেলেমেয়েদের কবর আছে, কিভাবে মৃত্যু হয়েছে তা লিপিবদ্ধ আছে, শুধু শাহ সুজারটি নেই। আমি বাংলাদেশ থেকে এসেছি শুনে বললেন, কোন কোন সূত্র মতে শাহ সুজা জীবনের শেষ কিছুদিন চিটাগাঙের এক গ্রামে কাটিয়েছেন। হয়ে গিয়েছিলেন পীর!
আমি জানতাম সম্রাট শাহজাহান অসুস্থ হয়ে যাবার পর তার ছেলেদের মধ্যে দিল্লীর মসনাদ দখলের যে ধ্বংসাত্মক লড়াই শুরু হয় তাতে বাংলার সুবাদার, শাহজাহানের মেঝ ছেলে শাহ সুজা বিপুল বিক্রমে যোগ দেন এবং ভয়াবহ ভাবে পরাজিত হয়ে আরাকান রাজ্যে পালিয়ে যান। কিন্তু চূড়ান্ত পরিণতির ব্যাপারে জানতাম না কিছুই।
সারা মোগল ইতিহাস ভীষণ কৌতহলদিপ্তক কিন্তু সম্রাট শাহজাহানের পতন ও একমাত্র মোগল সম্রাট হিসেবে নিজের ছেলের কাছে সিংহাসন হারানোর কাহিনী সবকিছুকে ছাপিয়ে যায়। সেখানে শাহ সুজা সাইডট্র্যাক হয়ে যান সহজেই। দফায় দফায় হেরে যাওয়া, পলায়নরত এই শাহজাদাকে নিয়ে ঘাটাঘাটিও কম হয়।
২০১৯ এর ফেব্রুয়ারিতে পুরানো ঢাকার বড় কাটরা দেখতে গিয়ে শাহ সুজার কথা আবার মাথায় আসে। তার বাসস্থান হিসেবেই নির্মাণ করা হয়েছিল বর্তমান চকবাজারের কাছে এই দালান। তবে এখানে শাহ সুজা বা তার পরিবারের কেউ কোন এক কারনে কখনো বাস করেননি।
সেই সময় কিছু ঘাটাঘাটি করি। ইচ্ছে ছিল গল্প আকারে লিখবো। সাজিয়ে নেই প্রাপ্ত তথ্য। জানতে পারি আরাকান রাজা শাহ সুজা সহ পরিবারের সবাইকে হত্যা করেন ষড়যন্ত্র করবার অপরাধে এবং শাহ সুজার বড় মেয়ে গুলরোখকে জোর করে বিয়ে করেন। ফ্যাসিনেটিং লাগে সেইসব ঘটনা প্রবাহ কিন্তু লেখা শুরু করবো কোথা থেকে তা নির্ধারণ করতে পারি না। আর সুত্রগুলো থেকে এত পরস্পরবিরোধী তথ্য পাই যে, যেকোন একদিক বেঁছে নেয়া আসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়।
গতমাসে ফেসবুকের মেমোরিতে ভেসে আসে বড় কাটরা ও শাহ সুজার কথা। আমি আবার ঘাটাঘাটি শুরু করি। এবার প্রচুর তথ্য পাই। একটা আবার এ রকম যে পাকিস্তানের সারগোদায় কয়েক বছর আগে শাহ সুজার কবর পাওয়া গেছে। নাম ও পদবী নাকি একদম কবরে খোদাই করা আছে।
গল্প আকারে লিখবার প্রবল তাগাদা পাচ্ছি কিন্তু শেষ কিভাবে হবে তা বেছে নেয়া আসম্ভব মনে হচ্ছে। তাই শাহজাদা শাহ সুজার মৃত্যু নিয়ে ধোঁয়াশা শিরোনামে এই লেখা প্রকাশ করেছি আমার ব্লগে ও সামহ্যয়ারইন ব্লগে। এখানে তার কিছু অংশ দিচ্ছি...
কোন কোন সুত্র বলে শাহ সুজা ত্রিপুরা হয়ে মণিপুরের হাইগনাঙ-এ আশ্রয় নেন। তাকে আশ্রয় দেয় পাঙ্গাল জনগোষ্ঠীর লোকেরা। অন্য সুত্র বলে তিনি এক সময় চট্টগ্রামে এসে পৌঁছান এবং পীর সন্ন্যাসী হয়ে বাকী জীবন কাটিয়ে দেন। আবার একটি সুত্র বলে পাকিস্তানের সারগোদায় তার কবর পাওয়া গেছে। কবরের ফলকে খোদাই করা আছে তার নাম, বাবা শাহজাহানের নাম। মৃত্যু সাল দেয়া আছে ১৬৮৩ খ্রিস্টাব্দ। তবে এসবই অনুমান এবং কিছু ক্ষেত্রে কল্পনাপ্রসূত। খুব সম্ভবত আরাকানের জঙ্গলেই বিশ্বস্ত অনুচরদের সাথে মারা যান শাহ সুজা।
শাহ সুজা ও তাঁর পরিবারের পরিণতির কাহিনী ইংরেজ ও ওলন্দাজ বণিকের মাধমে আগ্রাতে ও দিল্লীতে এসে পৌঁছায় কিছুকাল পর। এক ওলন্দাজ বণিক আরাকানে বসবাসকারী তাঁর সহকর্মীর একটি চিঠি পেশ করেন আওরঙ্গজেবের দরবারে। ফার্সি ভাষায় সেই চিঠি অনুবাদ করা হলে জানা যায় শাহ সুজা ও তাঁর পরিবারের দুর্ভাগ্যজনক পরিণতির কথা।
আওরঙ্গজেব সেই সময় নাকি দুই হাত তুলে ঈশ্বরের কাছে বলেছিলেন, 'তোমার দরবারে অহংকারীর পতন আর নিরহংকারীর পুরস্কার সর্বদা সুনিশ্চিত।'
বাবা শাহজাহান তখনো জীবিত, কিন্তু আওরঙ্গজেবের কাছে বন্দী। ঈশ্বরের কাছে মৃত ছেলের আত্মার মাগফেরাত করা ছাড়া কিছু করার ক্ষমতা নেই তখন তার।
আমি জানতাম সম্রাট শাহজাহান অসুস্থ হয়ে যাবার পর তার ছেলেদের মধ্যে দিল্লীর মসনাদ দখলের যে ধ্বংসাত্মক লড়াই শুরু হয় তাতে বাংলার সুবাদার, শাহজাহানের মেঝ ছেলে শাহ সুজা বিপুল বিক্রমে যোগ দেন এবং ভয়াবহ ভাবে পরাজিত হয়ে আরাকান রাজ্যে পালিয়ে যান। কিন্তু চূড়ান্ত পরিণতির ব্যাপারে জানতাম না কিছুই।
সারা মোগল ইতিহাস ভীষণ কৌতহলদিপ্তক কিন্তু সম্রাট শাহজাহানের পতন ও একমাত্র মোগল সম্রাট হিসেবে নিজের ছেলের কাছে সিংহাসন হারানোর কাহিনী সবকিছুকে ছাপিয়ে যায়। সেখানে শাহ সুজা সাইডট্র্যাক হয়ে যান সহজেই। দফায় দফায় হেরে যাওয়া, পলায়নরত এই শাহজাদাকে নিয়ে ঘাটাঘাটিও কম হয়।
২০১৯ এর ফেব্রুয়ারিতে পুরানো ঢাকার বড় কাটরা দেখতে গিয়ে শাহ সুজার কথা আবার মাথায় আসে। তার বাসস্থান হিসেবেই নির্মাণ করা হয়েছিল বর্তমান চকবাজারের কাছে এই দালান। তবে এখানে শাহ সুজা বা তার পরিবারের কেউ কোন এক কারনে কখনো বাস করেননি।
সেই সময় কিছু ঘাটাঘাটি করি। ইচ্ছে ছিল গল্প আকারে লিখবো। সাজিয়ে নেই প্রাপ্ত তথ্য। জানতে পারি আরাকান রাজা শাহ সুজা সহ পরিবারের সবাইকে হত্যা করেন ষড়যন্ত্র করবার অপরাধে এবং শাহ সুজার বড় মেয়ে গুলরোখকে জোর করে বিয়ে করেন। ফ্যাসিনেটিং লাগে সেইসব ঘটনা প্রবাহ কিন্তু লেখা শুরু করবো কোথা থেকে তা নির্ধারণ করতে পারি না। আর সুত্রগুলো থেকে এত পরস্পরবিরোধী তথ্য পাই যে, যেকোন একদিক বেঁছে নেয়া আসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়।
গতমাসে ফেসবুকের মেমোরিতে ভেসে আসে বড় কাটরা ও শাহ সুজার কথা। আমি আবার ঘাটাঘাটি শুরু করি। এবার প্রচুর তথ্য পাই। একটা আবার এ রকম যে পাকিস্তানের সারগোদায় কয়েক বছর আগে শাহ সুজার কবর পাওয়া গেছে। নাম ও পদবী নাকি একদম কবরে খোদাই করা আছে।
গল্প আকারে লিখবার প্রবল তাগাদা পাচ্ছি কিন্তু শেষ কিভাবে হবে তা বেছে নেয়া আসম্ভব মনে হচ্ছে। তাই শাহজাদা শাহ সুজার মৃত্যু নিয়ে ধোঁয়াশা শিরোনামে এই লেখা প্রকাশ করেছি আমার ব্লগে ও সামহ্যয়ারইন ব্লগে। এখানে তার কিছু অংশ দিচ্ছি...
কোন কোন সুত্র বলে শাহ সুজা ত্রিপুরা হয়ে মণিপুরের হাইগনাঙ-এ আশ্রয় নেন। তাকে আশ্রয় দেয় পাঙ্গাল জনগোষ্ঠীর লোকেরা। অন্য সুত্র বলে তিনি এক সময় চট্টগ্রামে এসে পৌঁছান এবং পীর সন্ন্যাসী হয়ে বাকী জীবন কাটিয়ে দেন। আবার একটি সুত্র বলে পাকিস্তানের সারগোদায় তার কবর পাওয়া গেছে। কবরের ফলকে খোদাই করা আছে তার নাম, বাবা শাহজাহানের নাম। মৃত্যু সাল দেয়া আছে ১৬৮৩ খ্রিস্টাব্দ। তবে এসবই অনুমান এবং কিছু ক্ষেত্রে কল্পনাপ্রসূত। খুব সম্ভবত আরাকানের জঙ্গলেই বিশ্বস্ত অনুচরদের সাথে মারা যান শাহ সুজা।
শাহ সুজা ও তাঁর পরিবারের পরিণতির কাহিনী ইংরেজ ও ওলন্দাজ বণিকের মাধমে আগ্রাতে ও দিল্লীতে এসে পৌঁছায় কিছুকাল পর। এক ওলন্দাজ বণিক আরাকানে বসবাসকারী তাঁর সহকর্মীর একটি চিঠি পেশ করেন আওরঙ্গজেবের দরবারে। ফার্সি ভাষায় সেই চিঠি অনুবাদ করা হলে জানা যায় শাহ সুজা ও তাঁর পরিবারের দুর্ভাগ্যজনক পরিণতির কথা।
আওরঙ্গজেব সেই সময় নাকি দুই হাত তুলে ঈশ্বরের কাছে বলেছিলেন, 'তোমার দরবারে অহংকারীর পতন আর নিরহংকারীর পুরস্কার সর্বদা সুনিশ্চিত।'
বাবা শাহজাহান তখনো জীবিত, কিন্তু আওরঙ্গজেবের কাছে বন্দী। ঈশ্বরের কাছে মৃত ছেলের আত্মার মাগফেরাত করা ছাড়া কিছু করার ক্ষমতা নেই তখন তার।
Comments