ইউরোপ ১৩৪৭ সাল থেকে ১৩৫১ সাল পর্যন্ত বিধ্বংসী ‘ব্ল্যাক ডেথ’ দেখেছে। কাল মৃত্যু।
মহামারীর অনেক বৈশিষ্ট্যের একটা হলো এটা বাণিজ্য পথ ধরে আগাতে সাচ্ছন্দবোধ করে। বাণিজ্য পথ ধরেই ১৪শ শতাব্দীতে ব্ল্যাক ডেথখ্যাত প্লেগ এশিয়া থেকে ইউরোপে ঢুকে।
এক ধরনের অতি ক্ষুদ্র পোকা বা মাছি প্লেগ রোগ বয়ে বেড়াতো। পোকাগুলো থাকতো ইঁদুরের গায়ে। ইঁদুর থেকে ইঁদুরে, ইঁদুর থেকে মানুষে জীবাণু স্থানান্তর হতো।
বাণিজ্যিক জাহাজে চেপে এসব ইঁদুর প্লেগ এশিয়া থেকে পৌঁছে গিয়েছিল ইউরোপীয় শহরগুলোয়। ছোঁয়াচে এ রোগ দ্রুত ছড়াতো, রোগীকে মেরেও ফেলত অল্পসময়ে। তিনদিন থেকে কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই মৃত্যু হত আক্রান্তদের।
এই মহামারীর প্রভাব ইউরোপ বয়ে বেড়িয়েছে পরবর্তী ২০০ বছর।
ব্ল্যাক ডেথ সেই সময় ইউরোপের অর্থনৈতিক সার্বিক জীবন কাঠামো বদলে দেয় অনেকটা, বদলে দেয় শিল্প-সাহিত্য, বদলে দেয় স্বাস্থ্যসেবা।
ইন্টারেস্টিংলি, ব্ল্যাক ডেথের শুরু ১৩৩১ সালে চীনের ইউয়ান সাম্রাজ্যে বলে মনে করেন অনেক গবেষক। সেই সময় সেখানে এক মহামারী হয়েছিল। তিন বছর পর হেবেই প্রদেশের ৫০ লাখ মানুষ প্লেগে মারা যায়। কিছু ইতিহাসবিদ মনে করেন মোঙ্গল শাসনের যবনিকাও ঘটায় এই প্লেগ। তৈমুর লং আচমকা আক্রমণ করে বসেন তারপর।
আরও ইন্টারেস্টিংলি ১৩৪৭ সালের অক্টোবর মাসে বারোটি জেনোজ জাহাজ ইতালীর সিসিলিতে পৌঁছালে এই মহামারী ইউরোপে ছড়িয়ে পড়ে।
বর্তমান করোনা ভাইরাসের উৎপত্তি স্থলও চীন এবং ইউরোপের গেইটওয়েও ইতালী।
ইউরোপ প্লেগ মোকাবেলায় তৈরি ছিল না। তখনকার চিকিৎসকরা, গবেষকরা এ রোগের মূল কারণটা ধরতে পারেননি। শুরু হয় আতঙ্ক ও কুসংস্কার। আতঙ্ক ও কুসংস্কারকে ইন্ধন জোগায় ঈর্ষা, দুর্বলকে নিয়ন্ত্রণ করার লোভ ।শুরু হয় ক্লাস ব্লেইমিং আর উইচ-হান্টিং। ক্লাস ব্লেইমিং আর উইচ-হান্টিংইয়ের নানান বৈশিষ্ট্যের একটা হলো এ সময় সবলরা দুর্বল ও সঙ্খালঘুদের উপর চেপে বসে। সেই পরিক্রমায় যাযাবর, ইহুদি এবং তুর্কিদের উপর চেপে বসে খ্রিস্টানরা। রটে যায় এরা প্লেগ ছড়াচ্ছে খ্রিস্ট ধর্মকে শেষ করার জন্য। শুরু হয় নিপীড়ন ও অত্যাচার।
প্লেগে আক্রান্ত মানুষের কবজি বা বগলে প্রথমে কালচে লাল ফোঁড়া উঠতো এবং দ্রুত বড় হতে হতে আপেল বা ডিমের আকৃতি ধারণ করতো। তারপর সারা শরীরেই এরকম কালচে লাল ফোঁড়া উঠতো। এরপর পচে পুঁজ বের হওয়া শুরু হতো। বেশীরভাগ ক্ষেত্রে মৃত্যু হতো সাতদিনের মধ্যে।
ব্ল্যাক ডেথের কবলে পড়ে ১৪’শ শতাব্দীতে বিশ্বের জনসংখ্যা ৪৫০ মিলিয়ন থেকে ৩৭৫ মিলিয়নে নেমে আসে বলে ধারনা করেন বিজ্ঞনী ও গবেষকরা।
ব্ল্যাক ডেথখ্যাত প্লেগ ইউরোপে ধর্মীয়, সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিপর্যয় তৈরি করে এবং নতুন করে মানুষকে ভাবতে শেখায়। পরিবর্তন হয় সার্বিক জীবন কাঠামো, স্বাস্থ্যসেবা, শিল্প-সাহিত্য, সামাজিক অনুশাসন। করোনা ভাইরাসও তাই করবে প্রতীয়মান।
তথ্য সুত্রঃ
কালো মৃত্যু
যুগে যুগে যত মহামারি ও জীবনহানি
প্লেগ
প্লেগ রোগের জন্য দায়ী জীবাণু কোনটি? এই রোগের চিকিৎসা কী?
মহামারীর অনেক বৈশিষ্ট্যের একটা হলো এটা বাণিজ্য পথ ধরে আগাতে সাচ্ছন্দবোধ করে। বাণিজ্য পথ ধরেই ১৪শ শতাব্দীতে ব্ল্যাক ডেথখ্যাত প্লেগ এশিয়া থেকে ইউরোপে ঢুকে।
এক ধরনের অতি ক্ষুদ্র পোকা বা মাছি প্লেগ রোগ বয়ে বেড়াতো। পোকাগুলো থাকতো ইঁদুরের গায়ে। ইঁদুর থেকে ইঁদুরে, ইঁদুর থেকে মানুষে জীবাণু স্থানান্তর হতো।
বাণিজ্যিক জাহাজে চেপে এসব ইঁদুর প্লেগ এশিয়া থেকে পৌঁছে গিয়েছিল ইউরোপীয় শহরগুলোয়। ছোঁয়াচে এ রোগ দ্রুত ছড়াতো, রোগীকে মেরেও ফেলত অল্পসময়ে। তিনদিন থেকে কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই মৃত্যু হত আক্রান্তদের।
এই মহামারীর প্রভাব ইউরোপ বয়ে বেড়িয়েছে পরবর্তী ২০০ বছর।
ব্ল্যাক ডেথ সেই সময় ইউরোপের অর্থনৈতিক সার্বিক জীবন কাঠামো বদলে দেয় অনেকটা, বদলে দেয় শিল্প-সাহিত্য, বদলে দেয় স্বাস্থ্যসেবা।
ইন্টারেস্টিংলি, ব্ল্যাক ডেথের শুরু ১৩৩১ সালে চীনের ইউয়ান সাম্রাজ্যে বলে মনে করেন অনেক গবেষক। সেই সময় সেখানে এক মহামারী হয়েছিল। তিন বছর পর হেবেই প্রদেশের ৫০ লাখ মানুষ প্লেগে মারা যায়। কিছু ইতিহাসবিদ মনে করেন মোঙ্গল শাসনের যবনিকাও ঘটায় এই প্লেগ। তৈমুর লং আচমকা আক্রমণ করে বসেন তারপর।
আরও ইন্টারেস্টিংলি ১৩৪৭ সালের অক্টোবর মাসে বারোটি জেনোজ জাহাজ ইতালীর সিসিলিতে পৌঁছালে এই মহামারী ইউরোপে ছড়িয়ে পড়ে।
বর্তমান করোনা ভাইরাসের উৎপত্তি স্থলও চীন এবং ইউরোপের গেইটওয়েও ইতালী।
ইউরোপ প্লেগ মোকাবেলায় তৈরি ছিল না। তখনকার চিকিৎসকরা, গবেষকরা এ রোগের মূল কারণটা ধরতে পারেননি। শুরু হয় আতঙ্ক ও কুসংস্কার। আতঙ্ক ও কুসংস্কারকে ইন্ধন জোগায় ঈর্ষা, দুর্বলকে নিয়ন্ত্রণ করার লোভ ।শুরু হয় ক্লাস ব্লেইমিং আর উইচ-হান্টিং। ক্লাস ব্লেইমিং আর উইচ-হান্টিংইয়ের নানান বৈশিষ্ট্যের একটা হলো এ সময় সবলরা দুর্বল ও সঙ্খালঘুদের উপর চেপে বসে। সেই পরিক্রমায় যাযাবর, ইহুদি এবং তুর্কিদের উপর চেপে বসে খ্রিস্টানরা। রটে যায় এরা প্লেগ ছড়াচ্ছে খ্রিস্ট ধর্মকে শেষ করার জন্য। শুরু হয় নিপীড়ন ও অত্যাচার।
প্লেগে আক্রান্ত মানুষের কবজি বা বগলে প্রথমে কালচে লাল ফোঁড়া উঠতো এবং দ্রুত বড় হতে হতে আপেল বা ডিমের আকৃতি ধারণ করতো। তারপর সারা শরীরেই এরকম কালচে লাল ফোঁড়া উঠতো। এরপর পচে পুঁজ বের হওয়া শুরু হতো। বেশীরভাগ ক্ষেত্রে মৃত্যু হতো সাতদিনের মধ্যে।
ব্ল্যাক ডেথের কবলে পড়ে ১৪’শ শতাব্দীতে বিশ্বের জনসংখ্যা ৪৫০ মিলিয়ন থেকে ৩৭৫ মিলিয়নে নেমে আসে বলে ধারনা করেন বিজ্ঞনী ও গবেষকরা।
ব্ল্যাক ডেথখ্যাত প্লেগ ইউরোপে ধর্মীয়, সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিপর্যয় তৈরি করে এবং নতুন করে মানুষকে ভাবতে শেখায়। পরিবর্তন হয় সার্বিক জীবন কাঠামো, স্বাস্থ্যসেবা, শিল্প-সাহিত্য, সামাজিক অনুশাসন। করোনা ভাইরাসও তাই করবে প্রতীয়মান।
তথ্য সুত্রঃ
কালো মৃত্যু
যুগে যুগে যত মহামারি ও জীবনহানি
প্লেগ
প্লেগ রোগের জন্য দায়ী জীবাণু কোনটি? এই রোগের চিকিৎসা কী?
Comments