Skip to main content

দিল্লীর নিজামউদ্দিন আউলিয়া

দিল্লীর প্রবীণরা উর্দু ও হিন্দীর মিশ্রণে বলেন যে ভারতীয় উপমহাদেশে যে কজন সাধক এসে সুফি মতবাদকে জনপ্রিয় করেছেন নিজামউদ্দিন আউলিয়া তাদে মধ্যে পথিকৃৎ। চিশতিয়া তরিকার সুফি সাধক ছিলেন তিনি। তারা বলেন যে তৎকালীন দিল্লীবাসীর উপর ব্যক্তিত্বের জাদু নিয়ে নিজামউদ্দিন আউলিয়া প্রবল প্রভাব বিস্তার করেন এবং পার্থিব বিষয়ে তাদের দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিবর্তন আনেন। নিজামউদ্দিন আউলিয়া নাকি বলতেন খোদার শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি মানুষ আর তাই মানুষকে ভালোবাসলেই খোদা সবচেয়ে বেশি খুশি হন। 

স্থানীয়দের সাথে কথা বলে বুঝা গেল, ছোট বেলায় মা খালাদের মুখে ইসলামের গুণগান সম্বলিত গল্পসমূহে যে নিজাম ডাকাতের উপস্থিতি ছিল যেখানে তিনি ৯৯জন লোক খুন করার পর আওলিয়া হিসাবে খ্যাতি লাভ করেছিলেন সেটা আদতে অন্যান্য ধর্মীয়  কল্পকাহিনীর মতনই বানানো; রূপকথা। নিজামউদ্দিন আউলিয়া উঠতি বয়সেই সুফি মতবাদ লাভ করেছিলেন এবং তা চর্চা করে আধ্যাত্মিকতা লাভ করেছিলেন। তিনি আদতে কোন খুন করেননি।

নিজামউদ্দিন আউলিয়ার প্রকৃত নাম মোহাম্মদ। বংশগত দিক থেকে তিনি ছিলেন হযরত আলী (রা.) এর উত্তরসূরি। তার মৃত্যুর পর ফিরোজ শাহ তুঘলক কবরে সমাধি-সৌধ নির্মাণ করলেও পরে তা অবলুপ্ত হয়। এরপর ১৫৬২-৬৩ সালে  ফরিদুঁ খান নামে এক ধনী আর একটি সমাধি-সৌধ নির্মাণ করেন যা বর্তমানের দরগাহ শরীফে অনুরূপ বলে মানেন স্থানীয়রা। 

দিল্লীর সুলতান গিয়াসউদ্দিন তুগলকের সাথে দ্বন্দ্ব এবং এক পর্যায়ে সুলতানের উদ্দেশ্যে বলা উক্তির কারনে নিজামউদ্দিন আউলিয়া উপমহাদেশের ইতিহাসে পোক্ত আসন গেড়েছেন। সুলতান তার খানকা শরীফ আক্রমণ করতে আসছেন যেনে নিজামউদ্দিন আউলিয়া বলেছিলেন - ‘হুনুজ দিল্লি দূর অস্ত’যার বাংলা অর্থ - দিল্লি বহু দূরে।

ঘটনাটা এরকম - সুলতান একটি প্রাচীর তৈরি করছিলেন যার জন্য প্রচুর মজুর প্রয়োজন ছিল। সেই একই সময় নিজামউদ্দিন আউলিয়া একটি দীঘি খনন করছিলেন তার আস্তানার পাশে। সুলতানের কাছে খবর গেল কিছু মজুর প্রাচীর তৈরিতে যোগ না দিয়ে আউলিয়ার দীঘি খননে ব্যাস্ত। সুলতান তখন দিল্লীতে নেই, জরুরী তলবে বাংলায় গেছেন বিদ্রোহ দমনে। সেখান থেকে একরাশ  আক্রোশ পাঠালেন দূত দিয়ে -  নিজামউদ্দিন আউলিয়া যেন এলাকা ছেড়ে চলে যান না হলে সম্রাট দিল্লী পৌঁছেই শায়েস্তা করবেন তাকে।

নিজামউদ্দিন আউলিয়া তখন বৃদ্ধ। তিনি অনুরাগীদের, শিষ্যদের বললেন -  হুনুজ দিল্লী দূর অস্ত।

খবর আসে সুলতান রওনা হয়েছেন দিল্লীর পথে। ভক্তরা অনুনয় করে নিজামউদ্দিনকে দিল্লি ত্যাগ করতে। নিজামউদ্দিন ধীর স্বরে বলেন - হুনুজ দিল্লী দূর অস্ত।

এর পরের দিন খবর আসে সুলতানের বহর আসন্ন, আর মাত্র কিছু পথ বাকি। ব্যাকুল হয়ে শিষ্যরা অনুনয় করে নিজামউদ্দিন আউলিয়াকে অন্য কোথাও চলে যেতে। নিজামউদ্দিন আউলিয়াকে তখন ঘিরে রয়েছে ঔদাসিন্য, তিনি স্মিতহাস্যে বলেন - হুনুজ দিল্লী দূর অস্ত।

নগরপ্রান্তে সুলতানের পুত্র তৈরি করেছিলেন অভ্যর্থনা মঞ্চ। গোধূলি বেলায় প্রবেশ করলেন সম্রাট। উঠলেন মঞ্চে। এক সময় মঞ্চ ভেঙ্গে পরে। সম্রাট কাঠের চাপায় পরে যান। তাকে মৃত উদ্ধার করা হয়। তার আর দিল্লীতে পৌঁছান হয় না - দিল্লী রয়ে যায় দূর অস্ত।

উর্দু ও হিন্দীর মিশ্রণে দিল্লীর প্রবীণরা বলেন যে কথিত আছে নিজামউদ্দিন আউলিয়া তার শিষ্যদের বলতেন আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে, অহম দূর করে, সুফি মতবাদের চর্চা করলে জীবনকালেই স্রষ্টার সাক্ষাৎ পাওয়া সম্ভব।

এ  দরগাহ শরীফে  উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায় পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন ভাষাভাষি মানুষের। । সন্ধ্যার সময় কাওয়ালি গান হয়। তা শুনে অঝরে কাঁদে কেউ কেউ। কেন যে জানে!

শোনা যায় সিলেটের হযরত শাহ জালাল ইয়ামেন থেকে নিজাম উদ্দিন আউলিয়ার সাথে সাক্ষাতের জন্য এসেছিলেন। নিজামউদ্দিন সাক্ষাত্ দেননি। হযরত শাহ জালাল তিনদিন ছিলেন কিন্তু সাক্ষাত পাননি। তিনদিনের মাথায় নিজামউদ্দিন এক খাদেমের মাধ্যমে জোড়া কবুতর উপহার হিসেবে দিয়ে শাহ জালালকে বিদায় দিয়েছিলেন।


নিজামউদ্দিন আউলিয়ার মাজারে পৌঁছানো যায় দিল্লীর যে কোন প্রান্ত থেকে। টেক্সি, উবার, মেট্রো, সব কিছুই মাজারের দোরগোড়াতে এসে থামে। পাশেই আছে উপমহাদেশের সবচেয়ে আদরের কবি - মির্জা গালিবের সমাধি। আর আছে শেষ মুঘল সম্রাট বাহাদুর শাহ জাফরের ছেলেদের কবর। কথিত আছে, ইংরেজ ক্যাপ্টেন হাডসন তাদেরকে সম্রাট শাহ জাফরের সামনে গুলি করে হত্যা করেছিল ১৮৫৭ সালে।

দিল্লী ভ্রমণের সেরা সময় হল অক্টোবর মাস থেকে মার্চ মাস, এইসময় আবহাওয়া খুবই মনোরম থাকে বলে প্রতীয়মান।

Comments

Popular posts from this blog

Dhaka in the 1950s and 1960s

In the mid 1950s, Dhaka, known as ‘Dacca’ at that time, was just a small provincial town with about 3,00,000 inhabitants. Dhanmondi at that time just started to grow; Maulvi Abdus Sobhan's family had some habitation in Sobhanbagh, Dhaka Stadium was being constructed to host cricket matches and New Market was starting to become a busy shopping area. Dhaka residents loved cinema since the time it was introduced. Baliadi Siddiki family owned Nishat Cinema Hall and held a mega event when the film ‘Aan’ by Mehboob Khan was released in 1952. Elephants were used by the hall owner to distribute leaflets and to spray colour water. There was another prominent hall named Britannia near Rex Restaurant at Gulistan but was closed down in the late 1950s. Gulistan Cinema Hall, city’s first modernity landmark, came up in 1952. Amber, started with Raj Kapoor and Nargis, was the first film the hall showed. Mukul which later became 'Azad 'used to show Bengali films from Kolkat...

সুন্দর পশু-পাখি, সুন্দর গাছ আর সুন্দর সুন্দর জঙ্গল নিয়ে সুন্দরবন

...প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় এদেশের মানুষের পক্ষ হয়ে বর্ম হিসেবে দাড়িয়ে যাওয়া সুন্দরবনের সাথে বেশীর ভাগ মানুষের প্রথম পরিচয় হয় বাংলা ১ম পত্রের গদ্য বইয়ে অথবা বাংলা ২য় পত্রের রচনায়। সুন্দরবন - এর আক্ষরিক অর্থ 'সুন্দর জঙ্গল' অথবা 'সুন্দর বনভূমি' কিন্তু নামকরণ হয়েছিল 'সুন্দরী গাছ' থেকে যা এখানে প্রচুর পরিমানে জন্মে। তবে যেহেতু স্থানীয় আদিবাসীরা অনেক আগে থেকে বনটিকে ‘চন্দ্র-বান্ধে’ নামে ডাকতো তাই হতে পারে ‘চন্দ্র-বান্ধে’ নামটি কালের পরিক্রমায় ‘সুন্দরবন’ হয়ে গেছে। বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেষে অবস্থিত এই বনের বাঘ ‘রয়েল বেঙ্গল টাইগার’ নামে পরিচিত যদিও সংখ্যায় এখন এ প্রাণী ক্রমনিম্নগামী। সুন্দরবন সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকায় অবস্থিত হবার কারনে এখানকার পানি নোনতা এবং এই লবণাক্ততার কারণে বাঘ অস্বস্তিকর অবস্থায় থাকে যা তাদের বেশ আগ্রাসী করে তোলে তাই  মাছ ও মধু সংগ্রহকারী মানুষদের উপর সুযোগ পেলে তারা ঝাপিয়ে পরে। ১৭৫৭ সালে পুরো বাংলার ইজারা নেয় বৃটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি যার মধ্যে সুন্দরবনও ছিল। এই বনের গুরুত্ব বুঝতে পেরে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি একটা মানচিত্র তৈরি করে সেইসময়...

Whom to blame for airplane crashes and how the Biman Bangladesh airlines crashed in Dhaka, Singapore & Sylhet

According to transportation safety boards and air crash investigation teams, airplane accidents occur at a rate of one per 1.2 million flights. It means probability of a regular person facing a crisis on air is very less, almost none in fact . Probability of dying is even slighter; 1 in 11 million. The odds of being in a car accident are around 1 in 12,000 in a developed country and around 1 in 2,000 in a developing country like Bangladesh. So, air traveling in reality is a safe medium. But due to wide media coverage on air crashes, people tend to think otherwise. Then again, most people fear air traveling because a sense of ‘helplessness’ digs in mind of most passengers when things go wrong on board. Surprising as it may sound, one can make the traveling a little safer just by opting to sit on the back of an airplane. It has been proved that passengers sitting at the back of a flight have more possibilities of survival compared to passengers sitting in front of the airp...