আমি একটা অকেজো ক্যাসিও ঘড়ি ও একটা পেয়ারা গাছ হারিয়ে ফেলেছিলাম। ক্যাসিও ঘড়িটি অকেজো হবার পরও আমি বাহাতে পরে থাকতাম কারন সেটা আমার প্রিয় ছিল কিন্তু একদিন তা আমি হারিয়ে ফেললাম। শৈশবে আমরা একটা বাংলোর মতন বাড়ীতে থাকতাম; ঠিকানা ৯/২ মইনুল রোড। সীমানার ভেতরে, গেইটের ঠিক ডানে একটা মাঠের মতন যায়গা ছিল আর সেখানে ছিল একটা পেয়ারা গাছ। গাছটি ফর্শা ছিল, তাতে পেয়ারাও ধরত ফর্শা; আমি পেয়ারা গাছটিকে ভালবেসেছিলাম কিন্তু একদিন তা আমি হারিয়ে ফেললাম।
কড়া শাসনের মধ্যে বড় হতে হয়েছে আমাকে, গণ্ডি ছিল ছোট; কিন্ত সেটা শৈশব ও কৈশোরের উদ্দীপনাকে শেকলে বেধে রাখতে পারেনি তেমন; প্রথম প্রেমে পড়া, প্রথম স্কুল পালানো, প্রথম পরীক্ষার শূন্য পাওয়া খাতা লুকানো, প্রথম আত্মমৈথুন, প্রথম ছক্কা, প্রথম গোল, প্রথম চিৎকার, প্রথম বাড়ী ছেড়ে পালানোর অভিজ্ঞতা শৈশব থেকে কৈশোরে পা দেবার সময়টাতে সেই ৯/২ মইনুল রোডের বাসায়। সঙ্গী ছিল একটা অকেজো ক্যাসিও ঘড়ি ও একটা পেয়ারা গাছ। চল ছিল ক্যাসেট প্লেয়ারে গান শুনবার, আমার কান তৈরি হচ্ছিল গীটার আর ড্রামসের সংমিশ্রণের তালে তালে। একদিন হাতে সেই অকেজো ক্যাসিও ঘড়ি পরে এবং ফর্শা পেয়ারা গাছের ততোধিক ফর্শা পেয়ারা হাতে নিয়ে পেট মোটা টিভির সামনে বসে শুনলাম স্টাইলিশ, জীবন শক্তিতে ভরপুর, খানিকটা পাহাড়ি চেহারার গোঁফওয়ালা এক শিল্পী গাইছেন -
তোমাকে ভালবেসে মন সপে ছিলাম, প্রদীপ ভেবে আলো জ্বেলেছিলাম,
তুমি গাবে জীবনের গান।
তুমি তো চাওনি গেতে জীবনেরই গান,না পারো বুঝতে এই শিল্পী মনের টান।
তোমাকে ভালবেসে মন সপে ছিলাম, প্রদীপ ভেবে আলো জ্বেলেছিলাম,
তুমি গাবে জীবনের গান।
তুমি তো চাওনি গেতে জীবনেরই গান,না পারো বুঝতে এই শিল্পী মনের টান।
সে গানের পরিবেশনা, সুর আমাকে মাতাল করলো ঠিক; কিন্তু কথা গুলো আকর্ষণ করলো বেশী। জানলাম ব্যান্ডের নাম ফিডব্যাক। কড়া অনুশাসন আর মধ্যবিত্ত পরিবারের কৃপণাটার বেড়া ভেঙে মাকে রাজী করালাম এই ক্যাসেট কিনে দেবার জন্য; পঁয়ত্রিশ টাকা বুক পকেটে নিয়ে বাজারে যেয়ে দেখি ফিডব্যাকের দুটি এ্যালবাম - উল্লাস ও মেলা। আমি জানি না কোন এ্যালবামে রয়েছে এ গান। দুটি এ্যালবাম কেনা সম্ভব না, কিনলাম মেলা। শুনলাম প্রকাণ্ড রিফ আর ড্রামসের মূর্ছনায় স্টাইলিশ, জীবন শক্তিতে ভরপুর, খানিকটা পাহাড়ি চেহারার গোঁফওয়ালা শিল্পীর করা প্রশ্ন - তার বুকের আলিঙ্গনে লুকিয়ে তুমি ভাবছো কি আমার কথা? তার চোখে চোখ রেখে তোমার মনে পরছে কি আমার কথা? না কোন বিরহের গান গেয়ে তুমি দিচ্ছো সান্তনা মনে? জানলাম তার নাম মাকসুদ। ততদিনে আরও জানান দিয়েদিয়েছেন - তিনি জন্মেছেন এই যুগে, তার অহংকার তিনি সঙ্গিত সৃষ্টি করেন এই যুগে। ফিডব্যাক ও মাকসুদ আমাকে বাংলাদেশ ব্যান্ড সঙ্গীতের পাকস্থলীতে নিয়ে ফেললেন। আমি গোগ্রাসে গিলতে লাগলাম বাংলা ব্যান্ডের গান।
* লেখাটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছে বাঙালীয়ানা সাইটে
বাবার ছিল বদলীর চাকরী, কবছর থাকতে হলো দেশের বাইরে, যখন ফিরে আসা, তখন আমি পরিপূর্ণ কিশোর, রক্তে বারুদ, বুকে আর্তনাদ। ততদিনে আমি অকেজো ক্যাসিও ঘড়ি ও পেয়ারা গাছ হারিয়ে ফেলেছি। আর হারিয়ে ফেলেছি দুই ক্লাস উপরে পড়া সেই মেয়েকে, শৈশবের শেষ দিনগুলোতে যার প্রেমে পড়েছিলাম। বছর তিনেক পর যখন দেখা হলো, সে তখন অন্যের বাহুডোরে । মাকসুদুল হকের লেখা কথা সত্য হয়ে আসে জীবনে - তার বুকের আলিঙ্গনে লুকিয়ে তুমি ভাবছো কি আমার কথা?
আমার স্থান হলো শাহীন স্কুলের ক্লাস নাইনের ডেল্টা সেকশনের দ্বিতীয় সারিতে। হাতে উঠলো টিক টিক কাটার ঘড়ি, মন আটক হলো পেয়ারার মতন ফর্শা সহপাঠিনীর হাটার ছন্দে। রাজনৈতিক কারনে বাবার সরকারী চাকরী থেকে প্রস্থান, ক্যান্টনমেন্টের শৃঙ্খল জীবন থেকে বাইরের সাগরে এসে নতুন পৃথিবী উন্মোচন আর কৈশোরের ভাল লাগার মেয়েকে আজীবন ভালবেসে যাবার প্রতিজ্ঞা আমাকে মনস্তাতিক ভাবে অগছালো করে দিল; আমি হুমায়ুন আহমেদ ও বাংলা ব্যান্ডের কাছে মুক্তির পথ চাইলাম। চাঁদ তারা সূর্য, ফুল পাখী গাছ পালা, হৃদয় জুড়ে ভালবাসায় ও এ এমন পরিচয়ে আমার মন ভরে না। আমার চাই তীব্র আবেগ, আমার চাই কলমে অশ্রু ভরে কান্না লিখতে শিখার উপায়, আমার চাই স্নেহের বাধন ভাঙ্গা ভোর দুপুর গোধুলি, আমার চাই অবিশ্বাসের মাঝে সত্যি খুঁজার কৃতিত্ব, আমার চাই এক মিনিট নিরবতায় হারানো প্রেমিকাকে মনে করা। ১৯৯৪ তে ফিডব্যাক প্রকাশ করলো বঙ্গাব্দ ১৪০০; আমি আবিস্কার করলাম এক গীতিকবি। মাকসুদুল হক গান শুরু করেন - আরেক নতুন গান নিয়ে শুরু হলো এ সন্ধ্যা বেলা বলে, তিনি গানের মাঝে চলে যাওয়া প্রেমিকাকে বলেন - তোমারই এত সুখের ছড়াছড়ি আমি দেখেছি নিরব আড়াল থেকে; তোমারই এত ভাল থাকা দেখে, আমি পারিনি দিতে সান্ত্বনা মনে। আমি ঝিম মেরে যাই, এভাবেও গান লেখা যায়! তিনি আমাকে সম্ভিত করে চলে যাওয়া প্রেমিকাকে সুরে সুরে বলেন - আবার এক ভোর এলে আমি চাইবো না তোমায় রেখে, আসুক কোন নতুন প্রেমের মুখ! আমার শৈশবের ভাল লাগার মেয়েকে আজীবন ভালবেসে যাবার প্রতিজ্ঞা মিলে যায় এই গানের সাথে। অকেজো ক্যাসিও ঘড়ি ও একটা পেয়ারা গাছ হারিয়ে ফেলার দুঃখ বড় হয়ে আসে। অন্য এক গানে মাকসুদুল হক ভালোবাসাকে ধন্যবাদ দেন; বলেন - সুখে থেকো তুমি বলেছিলে, সুখে আছি সবাই বলে; ঠোট মুখে হাসি লেগে আছে, অন্তর কাদে কেউ না জানে! আমি নিমগ্ন হই তার গীতিকবিতায়। তিনি প্রশ্ন করেন - পুরোনো চিঠি পড়তে বসে, আজো মনে সন্দেহ জাগে, আদৌ কি ভালোবেসে ছিলে, নাকি ছিলো এ ছলনা অবলিলাক্রমে?
এসব গান শুনে আমি বুঝি আমাকে লিখতে হবে তাই আমি লিখতে বসি, আমার লেখায় অকেজো ক্যাসিও ঘড়ি ও সেই পেয়ারা গাছ ফিরে আসে -
আমি একটা অকেজো ক্যাসিও ঘড়ি ও একটা পেয়ারা গাছ হারিয়ে ফেলেছি, আর হারিয়েছি তোমায়
শৈশব খুঁজি, কৈশোর খুঁজি তোমার রেখে যাওয়া চুলের ফিতায়।
আমি একটা অকেজো ক্যাসিও ঘড়ি ও একটা পেয়ারা গাছ হারিয়ে ফেলেছি, আর হারিয়েছি তোমায়
শৈশব খুঁজি, কৈশোর খুঁজি তোমার রেখে যাওয়া চুলের ফিতায়।
আমার পছন্দ হয় না দ্বিতীয় লাইন তাই আবার লিখি -
আমি একটা অকেজো ক্যাসিও ঘড়ি ও একটা পেয়ারা গাছ হারিয়ে ফেলেছি, আর হারিয়েছি তোমায়
তুমি ছিলে শৈশব ও কৈশোরে, তবে ফিরে আসবে আগামীর গানের খাতায়।
আমি একটা অকেজো ক্যাসিও ঘড়ি ও একটা পেয়ারা গাছ হারিয়ে ফেলেছি, আর হারিয়েছি তোমায়
তুমি ছিলে শৈশব ও কৈশোরে, তবে ফিরে আসবে আগামীর গানের খাতায়।
কিছু কাটাছেড়া করে আমি আরও লিখি -
দুপুরের পোড়া পিচের গন্ধ আর রাতের নিয়ন লাইট ,আমাকে নিয়ে যায় অতীতের তোমার কাছে,
বর্তমানে তোমার উপস্থিতি নেই তবে থাকবে তুমি আগামীর গানের খাতার মাঝে।
দুপুরের পোড়া পিচের গন্ধ আর রাতের নিয়ন লাইট ,আমাকে নিয়ে যায় অতীতের তোমার কাছে,
বর্তমানে তোমার উপস্থিতি নেই তবে থাকবে তুমি আগামীর গানের খাতার মাঝে।
এরপর লিখি -
এক মুঠো জোছনার প্রতিজ্ঞা, না তোমাকে করবো না,
গ্রীষ্মের তপদাহের মাঝে বৃষ্টি করবোনা কামনা,
রাত জেগে, রাতের শেষে ভোরের অপেক্ষায় থাকবো না,
শুধু চাইবো ফিরে আসো আগামীর গানের খাতায়।
এক মুঠো জোছনার প্রতিজ্ঞা, না তোমাকে করবো না,
গ্রীষ্মের তপদাহের মাঝে বৃষ্টি করবোনা কামনা,
রাত জেগে, রাতের শেষে ভোরের অপেক্ষায় থাকবো না,
শুধু চাইবো ফিরে আসো আগামীর গানের খাতায়।
একদিন নিলামে উঠাবো সকল দুঃখ, বেদনা
বিক্রি করবো সত্ত্বা,আত্মা ও ঠিকানা,
ললাটের দাগ মুছে খুলে দেব সীমানা,
যাতে তুমি আসো আগামীর গানের খাতায়।।
বিক্রি করবো সত্ত্বা,আত্মা ও ঠিকানা,
ললাটের দাগ মুছে খুলে দেব সীমানা,
যাতে তুমি আসো আগামীর গানের খাতায়।।
নিজের লেখা পছন্দ হয় না, আবর্জনা মনে হয় তাই ক্ষান্ত দেই।
মাকসুদুল হক আমাকে বঙ্গাব্দ ১৪০০ এর মাধ্যমে আরও জানালেন একুশে ফেব্রুয়ারিতে গায়ে খাদি পাঞ্জাবি, মিষ্টি কটকটি আর বই মেলা চটপটি দিয়ে বাঙালিত্ব জাহির করা বেশ্যাবৃত্তির নামান্তর; তিনি আমাকে জানালেন ডানপন্থী, বামপন্থী, উগ্রপন্থী আর এনজিও-পন্থী সব একই পেয়াজের কোয়া, এসব গরিব মারার পাঁয়তারা,ফিকি্র ফন্দি; আরও জানালেন ভিক্ষা বিতরণে বাঙালি অক্ষম তাই প্রকাশ্যে আড়ালে গঠিত হচ্ছে নব্য নব্য ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানি। তিনি রক্ত-চিৎকার করে বললেন যে তিনি শুনছেন মা বোনের কান্না আর বাবার গোঙ্গানি, তিনি শুনছেন গুপ্ত প্রেমিকার আর্তনাদ আর শুনছেন নির্লজ্জ আস্ফালনে খুনিদের জয়ধ্বনি। তিনি আমাকে ও আমাদের জানালেন উচ্চ পদস্থ তদন্ত কমিটি আসলে সৌজন্যমুলক সান্ত্বনার সমিতি। তিনি আমাকে প্রশ্ন করতে শিখালেন আমলাতান্ত্রিক জটিলতার মুখে গণতন্ত্র কেন বিপথগামী?
ডানপন্থী কি বা কারা? বামপন্থী? উগ্রপন্থী? নব্য নব্য ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানি? এ দেশ কেমন গণতন্ত্র চেয়েছিল? আমার ইতিহাস কি? আমি ছুটলাম লাইব্রেরিতে, আমি ছুটলাম নীলক্ষেতে। উত্তর প্রয়োজন ছিল আমার; উত্তর। আমি খুজতে লাগলাম উত্তর। পেলাম উত্তর, নিজেকে তৈরি করলাম তার সামনে যেয়ে দাঁড়াবার। তাই ১৯৯৬ সালের কোন এক সন্ধায় প্রথম বারের মতো যখন আর্মি স্টেডিয়ামের ব্যাকস্টেজে সাহস করে ঢুকে পড়লাম এবং মাকসুদুল হকের সাথে আলাপচারিতা শুরু করলাম, তিনি আমার প্রশ্নের ধরন দেখে অবাক হলেন, ভুরু কুচকিয়ে প্রশ্ন করলেন - কোন কলেজে পড় তুমি? শাহীন কলেজ শুনে খুশী হলেন কারন তিনিও এক সময় শাহীনে পড়েছেন। তাকে সেই সন্ধ্যায় অনেক কথা বলেছি কিন্তু বলা হয়নি আমি অকেজো ক্যাসিও ঘড়ি ও একটা পেয়ারা গাছ হারিয়ে ফেলেছি এবং এ নিয়ে একটা গান বেঁধেছি।
খুব দুঃখের সাথে জানলাম সেটাই ছিল ফিডব্যাকের সাথে তার শেষ কনসার্ট। নিজের ব্যান্ড গড়লেন, প্রাপ্ত বয়স্কদের নিষিদ্ধ এ্যালবাম বের করলেন; আমার ও আমাদের চেতনাকে নাড়া দিয়ে প্রশ্ন করলেন, গনতন্ত্র মানে কি কিছু বোকাদের মিছে শহীদ হওয়া? গনতন্ত্র মানে কি কাকের হাগায় তাদের স্মৃতিসৌধ ছাওয়া? তিনি বলিষ্ঠ কণ্ঠে বললেন - গণতন্ত্র মানে গ্রহনযোগ্য কোনো ইতিহাসের বই নাই,তাই কে রাজাকার কে মুক্তিযোদ্ধা নিশ্চিত করা কঠিন উপায়। তিনি আরও বললেন - গণতন্ত্র মানে স্বদেশী আকাশে উড়ে বিদেশী শকুন,গণতন্ত্র মানে সবকিছু বিকিয়ে গোলাম কিনুন! অন্য এক গানে তিনি নিজের মৃত্যুদন্ডের দাবি তুললেন তবে তার আগে বললেন - ইতিহাসের একটা সময় ছিল যখন বাঙালি ছিল জাতি, আজ বাঙালি নেহায়েতই এক রাজনৈতিক উপাধি। তৎকালীন ক্ষমতাসিনদের তিনি ডাকলেন রক্তপিপাসু দানবের দল বলে আর বললেন - আদিকাল হতে বাংলায় বসতি, ইতিহাসে ঘুর ঘুর করে ঘুরে এসেছে শুধু এক পুনরাবৃত্তি। গোঁড়ামির মুলে আঘাত করে লিখলেন - কোন পথে ওরা চলছে হায় পারওয়ারদিগার, যে হাতে তাদের কোরআন শরীফ সেই হাতে কেন তলোয়ার? না’রায়ে তাকবির আল্লাহু আকবার বলে দিচ্ছে জিহাদের ডাক, হত্যা করছে ওরা মানব জাতি, তোমার আশরাফুল মাখলুকাত| ততদিনে আমার গণ্ডি বেড়েছে, পরিধি বেড়েছে তাই আমি যতনা সিলেবাসের বই পড়ি, তার থেকে পাঁচগুন বেশী পড়ি ইতিহাস, ধর্ম আর রাজনৈতিক বই।
আমি শুনেছি, পড়েছি, দেখেছি মাকসুদ সাক্ষাতকারে, কথোপকথনে বলেন যে সাধারণ মানুষের কথা তিনি তার কণ্ঠে ধারণ করতে চান কিন্তু আমি জানি আদতে তার গান, গানের বিষয়, লেখনি সাধারণ মানুষের জন্য নয়। তার লেখা গান শুনবার জন্য, বোঝবার জন্য, অনুধাবন করার জন্য। গান শুনানোর জন্য হাজারো শিল্পী আছেন এ দেশে। যাদের গান বুঝতে হয়, অনুধাবন করতে হয়, মাকসুদ তাদের মধ্যে অগ্রদুত ও প্রধান।
১৯৯৯ সালে তিনি ফিরে এলেন শেষ বারের মতন তার লেখনি নিয়ে; জ্যাজ্-রক্ ফিউশন ভিত্তিক ওগো ভালোবাসা এ্যালবামে বললেন 'ভালোবাসা তোমায় দিলাম বিদায় - তুমি যাও ভেসে যাও স্বর্গে; যদি স্বর্গেও সুখ না পাও, অন্তরেও সুখ না পাও,নরকে যে বেঁচে আছি আমি! তিনি বললেন - ওগো পবিত্রতা তুমি অপবিত্র আমাকে কতটুকু ভালোবাসো জানি; তোমার অশ্রুর প্লাবন দেখে, অতল জলের নদী, লজ্জা যে পাবে ও সজনী।
এর পর তিনি আর গান লিখলেন না। লিখলেনই না! ১৯ বছর কেটে গেল, তিনি কি এক অভিমানে আর গান লিখতে মন দিলেন না। প্রশ্ন করলে উত্তর দেন অডিও বাজার তার মেধার মূল্য দিতে পারে না দেখে অ্যালবাম থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন, গান বেধে কি হবে! আমি দোষ দেখিনা এতে। নিম্ন ও মধ্যমানের শিল্পীরা যে বাজারে কদর পায়, সেখানে মাকসুদ অপাংক্তেয় থাকবেন এটাই স্বাভাবিক। কুকুরের পেটে ঘি হজম হয় না তাই বাংলাদেশের শিল্প অঙ্গন মাকসুদকে হজম করতে পারার কোন কারনই নেই।
তার মতন গান কেউ লিখে না তাই আমি ও আমরা ১৯ বছর ধরে অভুক্ত। অকেজো ক্যাসিও ঘড়ি ও একটা পেয়ারা গাছ হারিয়ে ফেলায় যে দুঃখ আমি পেয়েছিলাম, তার থেকে বেশী দুঃখ আমাকে দেয় মাকসুদুল হকের গান না লেখা।
১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮
১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮
মহাখালী, ঢাকা
* লেখাটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছে বাঙালীয়ানা সাইটে
* লেখাটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছে বাঙালীয়ানা সাইটে
Comments