Skip to main content

'F*ck the বিপ্লব' এখনো গল্প হয়ে উঠতে পারেনি

...খুব ইচ্ছে ছিল আমার প্রকাশিত প্রথম বইটিতে ১২টি গল্প থাকবে। কিন্তু প্রকাশকের বেঁধে দেওয়া সময়ের মাঝে ১১টি গল্প তৈরি করতে পেরেছিলাম আর ৩টি নির্মাণাধীন ছিল। চেষ্টা করেও কোনভাবে এই ৩টি শেষ করতে পারিনি। যে গল্পটি শেষ না হওয়া সত্বেও বইতে অন্তর্ভুক্ত করা যেত সেটার নাম ছিল 'F*ck the বিপ্লব'। নাম 'বালের বিপ্লব' ও হতে পারত কিন্তু বাল শব্দটিকে যথেষ্ট রুঢ় মনে হচ্ছিল না।

এই গল্পটি নামের মতনই অত্যন্ত কড়া এবং একটু অ্যানালিটিকাল। ২০১৫ সালে আমি ৭ নভেম্বরের বিপ্লব সংশ্লিষ্ট যেসব তথ্য উপাত্ত যোগাড় করেছিলাম এবং 'নাগরদোলায় উত্থান-পতন' শিরোনামে' যে সিরিজ লেখাটি তৈরি করেছিলাম, তার সূত্র ধরে এই গল্পের শুরু। পেশাগতভাবে একজন risk analyst হবার কারণে আমার চেতন, অবচেতন দুই মনই ৩ নভেম্বর থেকে ৭ নভেম্বর পর্যন্ত ঘটে যাওয়া ঘটনাবলি ও এর কলাকুশলীদের মূল উদ্দেশ্য, সাফল্য, ব্যর্থতার সরূপ তুলে ধরতে চেয়েছিল। এই বাসনার বহিপ্রকাশ 'F*ck the বিপ্লব' গল্পটি। গল্পের মূল চরিত্র ও দুই বন্ধু যাদের বহুবছর পর ভার্সিটির রিইউনিয়নে দেখা হয়। তাদের মতাদর্শ ছাত্র থাকা অবস্থায় ভিন্ন ছিল তাই এতদিন পর অবাক হয়ে তারা লক্ষ্য করে দুজনেই তাদের নিজ নিজ মতাদর্শ থেকে দূরে সরে এসেছে এবং এখন কর্নেল তাহেরের তথাকথিত সিপাহী বিপ্লবকে অপরিপক্ক ও দেশ বিধ্বংসী ঘটনা হিসেবে মনে করে।

পপুলার কালচার এবং পপুলার লিটারেচারে তাহের এবং জেনারেল জিয়াকে যেভাবে হিরো বলে তুলে ধরা হয় এ দুইজন নেতা আসলে ঠিক তার বিপরীত মেরুর লোক, মনে করে দুই বন্ধু। তাদের মতে, দেশকে পেছনে ঠেলে দেবার প্রক্রিয়া ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট শুরু হয় এবং একে চূড়ান্তভাবে নিশ্চিত করা হয় ৭ নভেম্বরের জিয়াকে ক্ষমতার শিখরে তুলে আনার মাধ্যমে।

গল্পের দুই বন্ধুর কথোপকথন চলতে থাকে। জীবনের ঘাত প্রতিঘাত পেরিয়ে এখন তারা বুঝতে পারে সমাজ পরিবর্তনের বানী কপচানো, সরকারকে ভারতের দালাল বা তাঁবেদার বলে উৎখাতের চেষ্টা, সাধারন সৈনিকদের দাবী আদায়ের জন্য বিপ্লবের ডাক আসলে বাল-সাল ভণ্ডামি। সব ক্ষমতায় যাবার ধান্দা।

কথোপকথনের মধ্য দিয়ে গল্পটি এগুতে থাকে। দুই বন্ধুর একজন এক পর্যায়ে বলে বসে কর্নেল তাহেরকে বঙ্গবন্ধুর খুনীদের দোসর বললেও ভুল হবে না। এ কথা শুনে অবাক হয় অন্যজন। যুক্তি খণ্ডাতে যেয়ে প্রথমজন তুলে আনে Lawrence Lifschultz প্রণীত 'Bangladesh, the Unfinished Revolution' বইয়ের কথা। সেই বইতে বর্ণনা করা আছে কর্নেল তাহের ১৫ আগস্ট সকালে বেতার কেন্দ্রে যান এবং খন্দকার মোশতাক আহমদ ও মেজর ডালিমকে পাঁচটি প্রস্তাব দেন। এরপর তিনি মেজর ডালিমকে তাতিয়ে দেন এই বলে যে, ‘বালের মেজর হয়েছো। এখন পর্যন্ত একটা মার্শাল ল’ প্রক্লেমেশন ড্রাফট করতে পারলে না।’ ১৫ আগস্টের খুনীদের সাথে তাহেরের সম্পর্ক ছিল না কিন্তু রশিদ-ফারুক-ডালিম গং বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে খন্দকার মোশতাকের ঘাড়ে চেপে ক্ষমতা দখল করার পরই তিনি ছুটে যান বেতার কেন্দ্রে, দেশ শাসনের অংশীদার হবার অভিপ্রায়ে পাঁচ দফা প্রস্তাব রাখেন। আবার ১৭ই আগস্ট সকালে ১১ নম্বর সেক্টরের সহযোদ্ধা নঈম জাহাঙ্গীর নারায়ণগঞ্জে তাহেরের সঙ্গে দেখা করতে গেলে কথা প্রসঙ্গে তিনিনঈম জাহাঙ্গীরকে বলেন ‘ওরা বড় রকমের একটা ভুল করেছে। শেখ মুজিবকে কবর দেয়া অ্যালাও করা ঠিক হয়নি। এখন তো সেখানে মাজার হবে। উচিত ছিল লাশটা বঙ্গোপসাগরে ফেলে দেয়া।’

কর্নেল তাহেরকে নিয়ে পপুলার লিটারেচারে আছে যে তার করা বিপ্লবের কারনেই তাকে ফাঁসী দেয়া হয়েছে। এটা যে পরিষ্কার মিথ্যাচার সেটাও 'F*ck the বিপ্লব' গল্পে উঠে এসেছে। বিপ্লবের পরের রাতে বেঙ্গল ল্যান্সারের সৈনিকরা ও বিপ্লবী সৈনিক সংস্থার সদস্যরা 'অফিসারদের রক্ত চাই' শ্লোগান দিয়ে দিয়ে যে ১২ জন আর্মি অফিসারকে হত্যা করে, তার দায় তাহেরকেই নিতে হয়েছে।

আমার প্রকাশিত গল্পগুলোতে সেই অর্থে টুইস্ট নেই। এই গল্পে একটা টুইস্ট এনেছিলাম তবে একদম শেষে নয়, মাঝামাঝি। তাত্ত্বিক আলোচনা বেশী হয়ে যাচ্ছে ভেবে একটু humor ও রেখেছিলাম। লিখেছিলাম কথোপকথনের এক পর্যায়ে বনানী ১১ নম্বর রোডে অবস্থিত সুইট ড্রিমস নামের দোকানের কথা, যেখানে মহিলাদের আন্ডার গার্মেন্টস বিক্রি হয়, পুরুষদের ঢুকতে মানা, উঠে আসে এবং একজন চটুল মন্তব্য করে- কর্নেল তাহের বা জেনারেল জিয়া কি এই বাংলাদেশ চেয়েছিলেন? তাহের তো চেয়েছিলেন বৈষম্যহীন সমাজ, চেয়েছিলেন সাম্যবাদ। সুইট ড্রিমস দোকানের অসাম্য নীতি তাকে শোকার্ত করতো হয়তো। আর জেনারেল জিয়া এই অসাম্য নীতি দেখলে হয়তো উত্তেজিত হয়ে আবার খাল কাটা কর্মসূচি শুরু করে দিতেন।

গল্পটি বইতে দেইনি কারন আমার মনে হয়েছিল বইয়ের অন্য গল্পগুলোর আমেজের সাথে এটা খাপ খাবে না। না দেয়াতে লাভ যেটা হয়েছে তা হলো এখন নতুন আরও কিছু সংযোজন করতে পারছি। গত এক বছরে ৭ নভেম্বর সংক্রান্ত আরও কিছু তথ্য পেয়েছি, সেগুলোও গল্পে ঢুকিয়ে দেব।

অনেকে আমাকে বলেছেন 'নাগরদোলায় উত্থান-পতন' সিরিজে আমি নিজের মতামত দিয়েছি যেটা এড়ানো কাম্য ছিল। কিন্তু সে লেখা ছিল ঘটনাবলীর বর্ণনা, আমি শুধু কৌতূহলোদ্দীপক করে উপস্থাপন করেছি। যে সব মতামত আমার বলে মনে হয়েছে সেগুলো আসলে সেই সময়ের মানুষগুলোর মতামত। অন্যদিকে 'F*ck the বিপ্লব' একটি ফিকশন এবং এখানে আমার নিজস্ব মতামত দেবার অবকাশ ছিল, রয়েছে।

Comments

Popular posts from this blog

Dhaka in the 1950s and 1960s

In the mid 1950s, Dhaka, known as ‘Dacca’ at that time, was just a small provincial town with about 3,00,000 inhabitants. Dhanmondi at that time just started to grow; Maulvi Abdus Sobhan's family had some habitation in Sobhanbagh, Dhaka Stadium was being constructed to host cricket matches and New Market was starting to become a busy shopping area. Dhaka residents loved cinema since the time it was introduced. Baliadi Siddiki family owned Nishat Cinema Hall and held a mega event when the film ‘Aan’ by Mehboob Khan was released in 1952. Elephants were used by the hall owner to distribute leaflets and to spray colour water. There was another prominent hall named Britannia near Rex Restaurant at Gulistan but was closed down in the late 1950s. Gulistan Cinema Hall, city’s first modernity landmark, came up in 1952. Amber, started with Raj Kapoor and Nargis, was the first film the hall showed. Mukul which later became 'Azad 'used to show Bengali films from Kolkat...

সুন্দর পশু-পাখি, সুন্দর গাছ আর সুন্দর সুন্দর জঙ্গল নিয়ে সুন্দরবন

...প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় এদেশের মানুষের পক্ষ হয়ে বর্ম হিসেবে দাড়িয়ে যাওয়া সুন্দরবনের সাথে বেশীর ভাগ মানুষের প্রথম পরিচয় হয় বাংলা ১ম পত্রের গদ্য বইয়ে অথবা বাংলা ২য় পত্রের রচনায়। সুন্দরবন - এর আক্ষরিক অর্থ 'সুন্দর জঙ্গল' অথবা 'সুন্দর বনভূমি' কিন্তু নামকরণ হয়েছিল 'সুন্দরী গাছ' থেকে যা এখানে প্রচুর পরিমানে জন্মে। তবে যেহেতু স্থানীয় আদিবাসীরা অনেক আগে থেকে বনটিকে ‘চন্দ্র-বান্ধে’ নামে ডাকতো তাই হতে পারে ‘চন্দ্র-বান্ধে’ নামটি কালের পরিক্রমায় ‘সুন্দরবন’ হয়ে গেছে। বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেষে অবস্থিত এই বনের বাঘ ‘রয়েল বেঙ্গল টাইগার’ নামে পরিচিত যদিও সংখ্যায় এখন এ প্রাণী ক্রমনিম্নগামী। সুন্দরবন সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকায় অবস্থিত হবার কারনে এখানকার পানি নোনতা এবং এই লবণাক্ততার কারণে বাঘ অস্বস্তিকর অবস্থায় থাকে যা তাদের বেশ আগ্রাসী করে তোলে তাই  মাছ ও মধু সংগ্রহকারী মানুষদের উপর সুযোগ পেলে তারা ঝাপিয়ে পরে। ১৭৫৭ সালে পুরো বাংলার ইজারা নেয় বৃটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি যার মধ্যে সুন্দরবনও ছিল। এই বনের গুরুত্ব বুঝতে পেরে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি একটা মানচিত্র তৈরি করে সেইসময়...

Whom to blame for airplane crashes and how the Biman Bangladesh airlines crashed in Dhaka, Singapore & Sylhet

According to transportation safety boards and air crash investigation teams, airplane accidents occur at a rate of one per 1.2 million flights. It means probability of a regular person facing a crisis on air is very less, almost none in fact . Probability of dying is even slighter; 1 in 11 million. The odds of being in a car accident are around 1 in 12,000 in a developed country and around 1 in 2,000 in a developing country like Bangladesh. So, air traveling in reality is a safe medium. But due to wide media coverage on air crashes, people tend to think otherwise. Then again, most people fear air traveling because a sense of ‘helplessness’ digs in mind of most passengers when things go wrong on board. Surprising as it may sound, one can make the traveling a little safer just by opting to sit on the back of an airplane. It has been proved that passengers sitting at the back of a flight have more possibilities of survival compared to passengers sitting in front of the airp...