... ১৯৮১
সালের ১লা জুন দুপুরে সরকারের অনুগত সেনাসদস্যরা রাঙ্গুনিয়ায় ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের কাছের
একটি পাহাড়ে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের কবর খুজে পায়। এই কবর থেকে মৃতদেহটি
তুলে একজন বিএনপি নেতার ( কোন কোন সুত্র অনুযায়ী সালাহউদ্দীন কাদের চৌধুরী) উপস্থিতিতে সনাক্ত করে
চট্টগ্রাম সিএমএইচে নিয়ে যায় তারা। সেখান থেকে হেলিকপ্টারে করে তা ঢাকায় নিয়ে
যাওয়া হয়। ১লা জুনই সংসদ ভবনে প্রেসিডেন্ট
জিয়াউর রহমানের নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়, প্রধানমন্ত্রী শাহ আজিজুর রহমান এর ইমামতি
করেন। সার্কিট হাউসে হামলাকারী ১৬ জন আর্মি অফিসারই প্রেসিডেন্ট জিয়াউর
রহমানের উপর ক্ষিপ্ত ছিল কারন তিনি স্বাধীনতা বিরোধী শাহ আজিজুর রহমানকে প্রধানমন্ত্রী
করেছেন এবং সালাহউদ্দীন কাদের চৌধুরীর মতো স্বীকৃত রাজাকারদের দলে নিয়েছেন।
নির্মম
পরিহাসের সাথে এই দুইজনই প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মৃত্যু পরবর্তী প্রধান দুইটি আবশ্যক
কর্ম সম্পাদন করেন।
এর আগে ১৯৮১ সালের ৩১ শে মে রাতেই এটা পরিস্কার হয়ে যায় যে লেফটেন্যান্ট
কর্নেল মতিউর রহমান, লেফটেন্যান্ট কর্নেল মাহবুব, লেফটেন্যান্ট
কর্নেল দেলাওয়ার ও লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফজলের অভ্যুত্থান ব্যর্থ হয়েছে।
এটা
বাস্তবে কোন অভ্যুত্থান ছিল না। এটা ছিল স্রেফ হত্যাকাণ্ড যার
দায় মেজর জেনারেল আবুল মঞ্জুরকে নিতে হয়েছিলো কারন তিনি ছিলেন ২৪ পদাতিক ডিভিশনের
জিওসি।
এর আগে ২৯শে মে চট্টগ্রাম বিএনপির উপদলীয় কোন্দল মেটাতে ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের বিএনপিতে টেনে আনার অভিপ্রায়ে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান চট্টগ্রামে আসেন। সময়টা হয়তো উপযুক্ত ছিল না কারন কলহের মূলে থাকা উপ-প্রধানমন্ত্রী জামালউদ্দীন আহমেদ তখন চট্টগ্রামে নেই এবং গোয়েন্দা সংস্থাগুলো প্রেসিডেন্টকে সফর বাতিল করতে অনুরোধ করেছিলো। প্রেসিডেন্টের আগের সফরগুলোয় মেজর জেনারেল মঞ্জুর বিমানবন্দরে তাকে অভ্যর্থনা জানাতে গেছেন। ২৮শে মে ঢাকা থেকে ২৪ পদাতিক ডিভিশনকে জানানো হয় প্রেসিডেন্টকে অভ্যর্থনা জানাতে সেনানিবাস থেকে মেজর জেনারেল আবুল মঞ্জুরের আসার প্রয়োজন নেই। এই নির্দেশ প্রেসিডেন্ট দিয়েছিলেন কিনা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। হয়তো এই ব্যপারটিই চূড়ান্ত ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি করে প্রেসিডেন্ট এবং ২৪ পদাতিক ডিভিশনের সিনিয়র অফিসারদের মাঝে যারা প্রেসিডেন্টের উপর বিভিন্ন ব্যাপারে অসন্তুষ্ট ছিল ।
এর আগে ২৯শে মে চট্টগ্রাম বিএনপির উপদলীয় কোন্দল মেটাতে ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের বিএনপিতে টেনে আনার অভিপ্রায়ে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান চট্টগ্রামে আসেন। সময়টা হয়তো উপযুক্ত ছিল না কারন কলহের মূলে থাকা উপ-প্রধানমন্ত্রী জামালউদ্দীন আহমেদ তখন চট্টগ্রামে নেই এবং গোয়েন্দা সংস্থাগুলো প্রেসিডেন্টকে সফর বাতিল করতে অনুরোধ করেছিলো। প্রেসিডেন্টের আগের সফরগুলোয় মেজর জেনারেল মঞ্জুর বিমানবন্দরে তাকে অভ্যর্থনা জানাতে গেছেন। ২৮শে মে ঢাকা থেকে ২৪ পদাতিক ডিভিশনকে জানানো হয় প্রেসিডেন্টকে অভ্যর্থনা জানাতে সেনানিবাস থেকে মেজর জেনারেল আবুল মঞ্জুরের আসার প্রয়োজন নেই। এই নির্দেশ প্রেসিডেন্ট দিয়েছিলেন কিনা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। হয়তো এই ব্যপারটিই চূড়ান্ত ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি করে প্রেসিডেন্ট এবং ২৪ পদাতিক ডিভিশনের সিনিয়র অফিসারদের মাঝে যারা প্রেসিডেন্টের উপর বিভিন্ন ব্যাপারে অসন্তুষ্ট ছিল ।
এর সপ্তাহ খানিক আগে, ১৯৮১ সালের ২০শে মে, সেনা সদরে ফর্মেশন কমান্ডারস
কনফারেন্সে ২৪ পদাতিক ডিভিশনের কম্যান্ডার মেজর জেনারেল আবুল মঞ্জুর অন্যান্য সিনিয়ার
জেনারেলদের সামনেই প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সাথে তর্ক জুড়ে দিয়েছিলেন।
উত্তেজিত
মঞ্জুর বিএনপির কিছু নেতা, কর্মী ও কিছু সেনা কর্মকর্তার দুর্নীতির ফিরিস্তি
তুলে ধরে প্রেসিডেন্টের কাছে জানতে চাইলেন কেন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না।
উপস্থিত
সিনিয়ার জেনারেলরা কোন পক্ষেই জাননি সেদিন, তারা নীরব থেকেছিলেন।
প্রেসিডেন্ট
এতে হয়তো ভাবলেন অন্য কোন জেনারেল দেশের রাজনীতি
নিয়ে মঞ্জুরের মতন এতো চিন্তিত নন। মঞ্জুর হয়তো ভাবলেন অন্য জেনারেলরা
তাকেই নীরব সমর্থন দিলেন এবং প্রেসিডেন্টের উপর তারাও সন্তুষ্ট নন।
পরদিন
মেজর জেনারেল মঞ্জুর চট্টগ্রাম সেনানিবাসে ফিরে গেলেন এবং তার অধিনস্তদের মিটিং এর
ব্যাপারে জানালেন। তার অধিনস্তরা বুঝে নিলো প্রেসিডেন্ট
কোন প্রতিকার করবেন না। তারা হয়তো এটাও বুঝে নিলো যে
তাদের এবার হার্ড লাইনে যেতে হবে।
এরও আগে ১৯৮১ সালের ২৫শে মার্চ সেনাবাহিনী দিবসে ( তখন আলাদা
আলাদা ভাবে পালিত হতো ) ঢাকা অফিসার্স ক্লাবে এক অনুষ্ঠানে
এসেছিলেন প্রেসিডেন্ট জিয়া। তিনি লনে হেটে হেটে কথা বলছিলেন
সিনিয়র জুনিয়র অফিসারদের সাথে। দশবারো জন অফিসারের সাথে কথা
বলার সময় একজন জুনিয়র অফিসার হঠাৎ করে প্রেসিডেন্ট জিয়াকে প্রশ্ন করে বসে “Sir, how could you make
rajakar Shah Aziz the Prime Minister of our country?” জেনারেল জিয়া
চটপট উত্তর দেন “Politics make strange bed fellows!” ভীড়ের মধ্যে
থেকে অন্যএকজন বলে বসে “Sir you have to pay for it.”
এরও কিছু আগে ১৯৮০ সালের ডিসেম্বর মাসে প্রেসিডেন্ট জিয়া ভাটিয়ারীতে
অবস্থিত মিলিটারি একাডেমীকে এসেছিলেন পাসিং আউট প্যারেডে। সেখানে উপস্থিত ছিলেন
মেজর জেনারেল মঞ্জুর। প্যারেড শেষ হলে মঞ্জুর প্রেসিডেন্টকে
অনুরোধ করেন সেনানিবাসে আসতে। তিনি বলেন “স্যার,উই নিড তো
ডিসকাস সামথিং ইম্পরট্যান্ট”। প্রেসিডেন্ট রাজী হননা। বরং তিনি তার সামরিক
সচিবকে নির্দেশ দেন হেলিকপ্টার মিলিটারি একাডেমীর ভেতরে আনতে। মেইক শিফট হেলি প্যাড বানানো হয়
দ্রুতটার সাথে। প্রেসিডেন্ট ভাটিয়ারী থেকে সরাসরি
ঢাকায় উড়ে যান। প্রেসিডেন্ট জিয়া ও মেজর জেনারেল মঞ্জুর একসময় খুব কাছের
বন্ধু ছিলেন। একজন আরেকজন কে চিনতেন ভালো করে। প্রেসিডেন্ট জিয়ার
হয়তো ক্ষীণ সন্দেহ ছিল যে সেনানিবাসে গেলে মঞ্জুর তার উপর চাপ প্রয়োগ করতে পারেন।
সেনাপ্রধান হিসাবে জিয়াউর রহমান নিরাপত্তার ব্যপারে যতটুকু সতর্কতা
অবলম্বন করতেন,
প্রেসিডেন্ট হবার পর তার ঠিক বিপরীতমুখি শিথিলতা চর্চা শুরু করেন
তিনি। বিএনপি নেতারা, সাংবাদিকরা, সরকারী কর্মকর্তারা এবং সমাজের গন্যমান্য ব্যক্তিরা সহজেই তার কাছে পৌছতে
পারতেন। হয়তো এটা তার সামরিক কর্মকর্তা থেকে বেসামরিক রাজনীতিবিদে
পরিবর্তন হবার প্রচেস্টার অংশ ছিল। কিন্তু মারা যাবার দিন রকেট
লাঞ্ছার আর মেশিনগানের আওয়াজে তার বুঝে যাওয়ার কথা যে সার্কিট হাউস আক্রান্ত হয়েছে।
তিনি
নিজেই কক্ষ থেকে বেরিয়ে এসেছিলেন। কেন বেরিয়ে আসলেন? বারান্দা
দিয়ে নিচে লাফিয়ে পরলেন না কেন? অথবা ঘরেই লুকিয়ে থাকলেন না
কেন? হয়তো ভেবেছিলেন হামলাকারীরা তখনো সার্কিট হাউজের ভেতরে
ঢুকেনি এবং গার্ড রেজিমেন্টের সদস্যদের নিয়ে তিনি এই হামলা সামলে নিতে পারবেন।
হয়তো
সদ্য ঘুম থেকে উঠে রিফ্লেক্ট রি-আকশনে তিনি বেরিয়ে এসেছিলেন।
৩১ মে চিটাগাং সার্কিট হাউসে ঢুকে লেফটেন্যান্ট কর্নেল মতিউর রহমান
প্রথম সুযোগেই গুলি করে প্রেসিডেণ্ট জিয়াউর
রহমানের মুখ ও শরীরের ডান পাশ ঝাজরা করে দেয়। প্রেসিডেণ্টের ঝাজরা দেহ মুখ-থুবড়ে পরে দরজার কাছে।
চট্রগ্রামে
বিএনপির উপদলীয় কোন্দল মিটাতে এসে জিয়াউর রহমান জাতীয় কোন্দল মিটিয়ে দেন ৩০ মে ১৯৮১
সালের ভোরে।
তথ্য সূত্রঃ
তথ্য সূত্রঃ
বাংলাদেশ: দি আনফিনিশড রেভল্যুশন, হিরোশিমা'জ শ্যাডো ও হোয়াই বসনিয়া?
লরেন্স লিফশুলৎজ
রহস্যময় অভ্যুত্থান ও গণফাঁসি
জায়েদুল আহসান, চর্চা প্রকাশন
বাংলাদেশ: রক্তাক্ত অধ্যায় (১৯৭৫-৮১)
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম. সাখাওয়াত হোসেন, পালক পাবলিশার্স
জিয়া-মঞ্জুর হত্যাকান্ড- এবং তারপর
এএসএম সামসুল আরেফিন
তিনটি সেনা অভ্যুথান ও কিছু না বলা কথা
লেঃ কর্নেল এম এ হামিদ, মোহনা প্রকাশনী
ক জেনারেলের নীরব স্বাক্ষ্য: স্বাধীনতার প্রথম দশক
মেজর জেনারেল (অব.) মঈনুল হোসেন চৌধুরী, বীর বিক্রম; মাওলা ব্রাদার্স
স্বাধীন বাংলার অভ্যুদয় এবং অতঃপর
কামরুদ্দীন আহমদ, নওরোজ কিতাবিস্তান
Comments