Skip to main content

হার জিৎ চিরদিন থাকবে, তবুও এগিয়ে যেতে হবে

আমরা কিছু জিতেছি, কিছু হেরেছি। নানা বাধা বিঘ্ন পেরিয়ে, এই হার জিতের মধ্যে দিয়ে দেশকে এগিয়ে নিয়েছি, অর্থনীতিক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করেছি। অর্থনীতিক প্রবৃদ্ধি এখন ৭ শতাংশের উপরে তবে কাজ আরও বাকী আছে। এ অর্থবছরের ৭.২৪ শতাংশ  প্রবৃদ্ধি আসলে একটি স্বাভাবিক ফলাফল, এটাই হবার কথা; এটাকে বড় করে দেখে বাংলাদেশী হিসেবে আমাদের গর্ব করারও কিছু নেই আর এটাকে একটা এচিভম্যান্ট ভেবে সরকারেরও আত্ততৃপ্তির ঢেকুর তুলবার সুযোগ নেই। এটি বলছি এ কারনে যে উৎপাদন বাড়লে অর্থনীতিক প্রবৃদ্ধি হয় আর উৎপাদিত পন্যের জন্য প্রয়োজন বাজার। গ্লোবালাইজেসনের এই যুগে উৎপাদনমুখী মেশিন আমদানী করে উৎপাদন বাড়ানো গেছে বহুগুন এবং সেই গ্লোবালাইজেসনের কারনেই বাজার তো আগে থেকেই তৈরি হয়ে আছে বিশ্বের নানা প্রান্তে। আর অর্থনীতিক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করার বহু সাকসেস মডেল তো ছিলই চোখের সামনে, গুগলের সার্চে আর ইউটিউবে। অন্য একটি বিষয়ও এখানে কাজ করেছে - ১৯৯০ দশকের পর থেকে এখন পর্যন্ত স্থিতিশীল অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি। এসময়ে এশিয়া ও আফ্রিকার কিছু দেশে উচ্চ হারে প্রবৃদ্ধি হলেও সেটি স্থিতিশীল হয়নি, বাংলাদেশেরটি উচ্চ হারে হয়নি তবে স্থিতিশীল ছিল পুরোটা সময়। সাথে সাথে বেড়েছে পারচেজিং পাওয়ার, সেটাও স্থিতিশীল গতীতে।


বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সাফল্য যেমন ভিন্ন ভিন্ন খেলোয়াড়দের পারফর্মেন্সের উপর নির্ভর করে, অর্থনীতিক প্রবৃদ্ধি তথা সাফল্যও কৃষি, সেবা ও শিল্প খাতের ধাপে ধাপে বেড়েচলার উপর নির্ভর করে। আশ্চর্যজনকভাবে কৃষি ও সেবা খাতের অবদান এ অর্থবছরে ১৫.৩৫ শতাংশ ও ৫৩.১২ শতাংশ থেকে যথাক্রমে ১৪.৭৯ শতাংশ এবং ৫২.৭৩ শতাংশে নেমে এসেছে। অন্যদিকে শিল্পখাত ৩১.৫৪ শতাংশ থেকে এ অর্থবছরে ৩২.৪৮ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। এটি ইঙ্গিত দেয় যে যতই 'বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ' এবং 'সার্ভিস ইন্ডাস্ট্রি ইস দি প্লেস ফর ইনভেস্টমেন্ট' বলে গলা ফাটানো হউক না কেন, শিল্পখাত ইস স্টিল দি সাকিব আল হাসান অফ দ্যা ইকোনমিক টিম। কিন্তু দেশের অর্থনীতিতে ৩২.৪৮ শতাংশ আবদান দেওয়া শিল্পখাত অনেক ক্ষেত্রে নিগৃহীত। সাকিব আল হাসানের যেমন haters' group আছে, শিল্পখাতেরও তাই। এই নেই, সেই নেই, এই আসুবিধা, সেই আসুবিধা বলে এরা সুযোগ থাকা সত্ত্বেও নিজেরা শিল্পখাতে বিনিয়োগ করছে না এবং অন্যদের নিরুৎসাহিত করছে। বিশ্বব্যাংকও ত্রমাগত ভাবে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য কৃষি ও সেবা খাতকে মূল কৃতিত্ব দিচ্ছে। সাকিব আল হাসান তথা শিল্পখাতের প্রতি এই বিরাগ অনুমানযোগ্য - দাম্ভিকতা ও ঔদ্ধত্য এটিটুড। সাকিব আল হাসান দারুন দাম্ভিক, ঔদ্ধত্য ও বেয়াদপ। শিল্পখাতও তাই।
তবে এই ইকোনমিক টিমে, তথা অর্থনীতিক দলে আরও খেলোয়াড় রয়েছে - মূল্যস্ফীতি, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, এক্সচেঞ্জ রেট ও বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ। এরাও কম বেশী পারফর্ম করেছে গত কয়েক বছর যার ধারাবাহিকতায় এই অর্থনীতিক প্রবৃদ্ধি। এক সুশাসন নামক খেলোয়াড় দলে নেই তবে সে না থাকার পরও বাংলাদেশের ধারাবাহিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বিস্ময়কর।
৭.২৪ শতাংশ অর্থনীতিক প্রবৃদ্ধি হতে পারে একটা দরজা; আমরা বাংলাদেশী হিসেবে ভাবতে পারি একটা ‘প্রবেশ স্তর’ আমরা পেরিয়ে এসেছি। এখন বিনিয়োগে দক্ষতা বাড়াতে পারলে এই প্রবৃদ্ধিও প্রবৃদ্ধি আমরা ঘটাতে পারি। মূলধনের কমতি নেই, পারচেজিং পাওয়ারে ঘাতিটি নেই, জনসাধারণের বাড়তি ব্যয়ে আপত্তি নেই, বিএনপি-জামাতের ট্রাক পুড়িয়ে রপ্তানী বাধাগ্রস্ত করবার মুরোদ নেই, তাই সামনে আসলে উজ্জল ভবিষ্যৎ, শুধু যেমন চলছে, তেমনটি নিশ্চিত যদি করা যায়।
এই প্রবৃদ্ধি  আগামী ১০ বছরে ৮ শতাংশে নিয়ে যাওয়া সম্ভব যদি বিনিয়োগের হার, যার মধ্যে বিদেশি বিনিয়োগ অন্তর্ভুক্ত, বর্তমানের ২২ শতাংশ থেকে ৩৫ শতাংশে উন্নীত করা যায়, যদি রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা যায় এবং দাম্ভিক, ঔদ্ধত্য ও বেয়াদপ শিল্পখাতকে তার মতন খেলতে দেওয়া যায়। তবে যদির কথা নদীতে ফেলে কাজে মনোযোগ দেওয়াটা বেশী প্রয়োজন।
অর্থনীতিক উন্নতির ক্ষেত্রে গণতন্ত্র ভালো না স্বৈরতন্ত্র ভালো, সেটা ততটাই ধোয়াটে যতটা কঠিন বের করা মানুষের পাহাড় পছন্দ বেশী না সমুদ্র। তবে যদি এমন কোন যায়গা পাওয়া যায় যেখানে পাহাড় ও সমুদ্র দুটাই আছে সেখানে সবাই উপভোগ করবে। তেমন করেই গণতন্ত্রের আদলে যদি স্বৈরতান্ত্রীক কিছু এলিমেন্ট ঢুকিয়ে কাজ আদায় করা যায় তাহলে তা অর্থনীতির জন্য ভালো; তাতে বাকা ব্যবসায়ীরা সোজা থাকে, বিরোধীদল আন্দোলনের নামে জ্বালাও পোড়াও করতে পারে না, মানবসম্পদের উন্নতি হয়, স্থিতিশীলতার কারনে জনসাধারণ হাত খুলে ব্যয় করে, টাকার চাকা সচল থাকে।
তবে অর্থনীতিক প্রবৃদ্ধি ও পারচেজিং পাওয়ার বেড়ে যাওয়া মানেই নয় দেশে দারিদ্রতা পুরোপুরি কমে গেছে, দুর্নীতি কমে গেছে, আকাশ বাতাস আন্যন্দে ছেয়ে গেছে। বরং দুর্নীতির প্রবৃদ্ধি পাল্লা দিয়ে বেড়েছে। তবে মন্দের ভালো হলো এই যে দুর্নীতি কিছু ক্ষেত্রে অর্থনীতিক প্রবৃদ্ধির সহায়ক হিসেবে কাজ করে। সরকার যারা পরিচালনা করেন তারাই ঠিক করতে পারেন কতটুকু দুর্নীতি মেনে নেবেন এবং কখন লাগাম টেনে ধরা প্রয়োজন।  আর অর্থনীতিক প্রবৃদ্ধির সাথে সাথে বৈষম্য-অসমতাও বৃদ্ধি পায়, আমাদের দেশে তো এটি এখন খোলা চোখেই দেখা যায়, পরিসংখ্যান প্রয়োজন হয় না। তাই বলছিলাম কাজ আরও বাকী আছে, গর্ব করারও কিছু নেই,  আত্ততৃপ্তির ঢেকুর তুলবারও  সুযোগ নেই। আর কাজ করতে করতে আমরা গাইতে পারি ‘হার জিৎ চিরদিন থাকবে, তবুও এগিয়ে যেতে হবে; বাধা বিঘ্ন না পেরিয়ে বড় হয়েছে কে কবে!’

Comments

Popular posts from this blog

Dhaka in the 1950s and 1960s

In the mid 1950s, Dhaka, known as ‘Dacca’ at that time, was just a small provincial town with about 3,00,000 inhabitants. Dhanmondi at that time just started to grow; Maulvi Abdus Sobhan's family had some habitation in Sobhanbagh, Dhaka Stadium was being constructed to host cricket matches and New Market was starting to become a busy shopping area. Dhaka residents loved cinema since the time it was introduced. Baliadi Siddiki family owned Nishat Cinema Hall and held a mega event when the film ‘Aan’ by Mehboob Khan was released in 1952. Elephants were used by the hall owner to distribute leaflets and to spray colour water. There was another prominent hall named Britannia near Rex Restaurant at Gulistan but was closed down in the late 1950s. Gulistan Cinema Hall, city’s first modernity landmark, came up in 1952. Amber, started with Raj Kapoor and Nargis, was the first film the hall showed. Mukul which later became 'Azad 'used to show Bengali films from Kolkat

সুন্দর পশু-পাখি, সুন্দর গাছ আর সুন্দর সুন্দর জঙ্গল নিয়ে সুন্দরবন

...প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় এদেশের মানুষের পক্ষ হয়ে বর্ম হিসেবে দাড়িয়ে যাওয়া সুন্দরবনের সাথে বেশীর ভাগ মানুষের প্রথম পরিচয় হয় বাংলা ১ম পত্রের গদ্য বইয়ে অথবা বাংলা ২য় পত্রের রচনায়। সুন্দরবন - এর আক্ষরিক অর্থ 'সুন্দর জঙ্গল' অথবা 'সুন্দর বনভূমি' কিন্তু নামকরণ হয়েছিল 'সুন্দরী গাছ' থেকে যা এখানে প্রচুর পরিমানে জন্মে। তবে যেহেতু স্থানীয় আদিবাসীরা অনেক আগে থেকে বনটিকে ‘চন্দ্র-বান্ধে’ নামে ডাকতো তাই হতে পারে ‘চন্দ্র-বান্ধে’ নামটি কালের পরিক্রমায় ‘সুন্দরবন’ হয়ে গেছে। বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেষে অবস্থিত এই বনের বাঘ ‘রয়েল বেঙ্গল টাইগার’ নামে পরিচিত যদিও সংখ্যায় এখন এ প্রাণী ক্রমনিম্নগামী। সুন্দরবন সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকায় অবস্থিত হবার কারনে এখানকার পানি নোনতা এবং এই লবণাক্ততার কারণে বাঘ অস্বস্তিকর অবস্থায় থাকে যা তাদের বেশ আগ্রাসী করে তোলে তাই  মাছ ও মধু সংগ্রহকারী মানুষদের উপর সুযোগ পেলে তারা ঝাপিয়ে পরে। ১৭৫৭ সালে পুরো বাংলার ইজারা নেয় বৃটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি যার মধ্যে সুন্দরবনও ছিল। এই বনের গুরুত্ব বুঝতে পেরে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি একটা মানচিত্র তৈরি করে সেইসময়

Revolt at BDR Headquarters

Soldiers of the BDR Headquarters in Dhaka staged a revolt against their top officers including the DG. Rumors are all around. Some say, the DG is dead. Others include - soldiers want pay raise; they want full scale war against Indian BSF etc. But here is the rumor that beats all by a long margin - JMB naki actually BDR HQ attack korse. Next target High Court. Ora naki BDR DG ke convince korse to join them!