বৈশাখের শুরুতে ইলিশ মাছ তার ডিমান্ড – সাপ্লাই সমীকরণের ব্যূহ ভেদ করে অর্থনীতিবিদদের আর নীতিনির্ধারকদের বেশ বেকায়দায় ফেলে দেয়। ইলিশ মাছ কেনা না কেনার উপর বাংলাদেশী মধ্যবিত্তের আর্থিক, সামাজিক অবস্থার ক্ষমতা, অক্ষমতা এবং ব্যক্তিগত দম্ভ, আত্মশ্লাঘা,বিমর্ষতা প্রকাশ পায়।
এবারো ইলিশ মাছের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে কয়েক গুন।মাছের ব্যবসায়ীরা বেশ একটা কোপ মেরেছেন ভোক্তা শ্রেণীর উপর। শহুরে ভোক্তারাও প্রেস্টিজ ইস্যুতে কিনছেন ইলিশ মাছ যদিও রেডিও টিভিতে ব্যাপক প্রচারণা চালানো হয়েছে না কেনার জন্য। আবহমানকাল থেকে পহেলা বৈশাখের সঙ্গে এই ইলিশের কোনদিন সম্পর্ক ছিলো না।এটা নিতান্তই শহুরে মানুষের নব্য আবিষ্কার।
এখন বাঙালি সংস্কৃতির সবচেয়ে বড় উৎসব পহেলা বৈশাখ। সারা বিশ্বের বাঙ্গালীরাই বাংলা নববর্ষ পালন করে ধুমধাম করে।স্বতন্ত্র ঐতিহ্য ও প্রচলিত আনন্দমুখরতার বাইরে এই উৎসবটির কিছু বাণিজ্যিক দিক আছে। যেমন কাপড়, অলঙ্কার এবং খাবার ব্যবসায়ীদের কাছে পহেলা বৈশাখ বেশ রমরমা নগদ প্রাপ্তির ব্যাপার। বৈশাখ আসার প্রায় এক মাস আগ থেকেই নতুন ডিজাইনের পোশাক ও অলংকার নিয়ে পশরা বসান ব্যবসায়ীরা। পহেলা বৈশাখে অবধারিতভাবে শহরে ও গ্রামে কুটির শিল্প সহ বিভিন্ন পণ্যের মেলা বসে যেখানে ব্যবসায়ীরা তাদের পণ্য সামগ্রী গ্রাহকদের সামনে আকর্ষণীয় ভাবে উপস্থাপন করেন। বিক্রি হয় ব্যাপক। কাঠ, বাঁশ, বেত ও মাটির তৈরি হস্তশিল্প হয়ে উঠে মুল। নামকরা হোটেল ও রেস্টুরেন্টগুলিতে বিশেষ খাবারের ব্যবস্থা রাখা হয়। লক্ষ্য তাদের যতো না নববর্ষকে বরণ, তার চেয়ে অনেক বেশী আর্থিক।
গ্রামের চিত্র ভিন্ন। প্রযুক্তিগত অগ্রগতি হলেও এখনও নববর্ষের পহেলা বৈশাখের দিনে গ্রামের দোকানদার ও ব্যবসায়ীরা ঐতিহ্যগত বাণিজ্যিক চর্চা করেন ও সনাতন নীতি পালন করেন। যে সমস্ত গ্রাহকেরা বাঁকীতে পন্য সামগ্রী ক্রয় করে, তাদের বকেয়া পরিশোধের জন্য ভোজের আমন্ত্রণ জানানো হয়। প্রচলিত নিয়ম অনুসারে গ্রাককেরা ভোজের পর তাদের বকেয়া পরিশোধ করেন।
কখন থেকে পহেলা বৈশাখ উৎসব? আর ইংরাজী ও হিজরি সন থাকাতেও কেন প্রয়োজন হলো বাংলা সনের? আসলে মোগল সম্রাট আকবরের সিংহাসনে আরোহনের দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে তার রাজস্ব র্কমর্কতা আমির ফতেহউল্লাহ সিরাজী বৈশাখকে উৎসব হিসেবে পালন করার নির্দেশ দেন।তখন স্বল্প মাত্রায় পালন হতো বৈশাখ। এরপর মোগল সম্রাট জাহাঙ্গীরের নির্দেশে সুবদোর ইসলাম খা চিশতি ঢাকা কে যখন রাজধানী হিসেবে গড়ে তুললেন, তখন থেকে রাজস্ব আদায় ও ব্যবসা বাণিজ্যের হিসাব-নিকাশ শুরু করার জন্য বাংলা সনের উপর জোর দেয়া হয়। তখন সাধারন মানুষদের চৈত্র মাসের শেষ দিনের মধ্যে সব খাজনা, মাশুল ও শুল্ক পরিশোধ করতে হতো। এর পরদিন অর্থাৎ পহেলা বৈশাখে জমির মালিকরা নিজ নিজ অঞ্চলের অধিবাসীদেরকে মিষ্টি দিয়ে আপ্যায়ন করতেন, আয়োজন করতেন বিভিন্ন উৎসবের। সম্রাট আকবরের অনুকরণে সুবদোর ইসলাম চিশতি তার বাসভবনের সামনে সব প্রজার শুভ কামনা প্রত্যাশা করে মিষ্টি বিতরণ এবং বৈশাখ উৎসব পালন করতেন। সেখানে সরকারি কর্মচারী থেকে শুরু করে জমিদার, কৃষক ও ব্যবসায়ীরা উপস্থিত থাকত। প্রজারা খাজনা নিয়ে আসত । খাজনা আদায় ও হিসাব-নিকাশের পাশাপাশি চলত মেলায় গান-বাজনা, গরু-মোষের লড়াই, কাবাডি খেলা ও হালখাতা অনুষ্ঠান। তখন থেকে ধীরে ধীরে পহেলা বৈশাখ উৎসবের দিন হিসেবে মুখ্য হয়ে উঠে।সম্রাট আকবর ও সম্রাট জাহাঙ্গীর নিশ্চয়ই ভাবেননি তারা ভবিষ্যৎ জাতির জন্য ধর্ম নিরপেক্ষ একটা উৎসবের ভিত্তি করে যাচ্ছেন।
বঙ্গাব্দের বারো মাসের নামকরণ করা হয়েছে নক্ষত্রমন্ডলে চন্দ্রের আবর্তনে বিশেষ তারার অবস্থানের উপর ভিত্তি করে। নামগুলো নেয়া হয়েছে জ্যোতির্বিজ্ঞান বিষয়ক গ্রন্থ ‘সূর্যসিদ্ধান্ত’থেকে। বৈশাখ নামটি এসেছে বিশাখা নক্ষত্রের নামানুসারে।
আধুনিক বাংলা নববর্ষ উদযাপন প্রথম পালন করা হয় হয় ইংরাজী ১৯১৭ সালে। প্রথম মহাযুদ্ধে ব্রিটিশদের বিজয় কামনা করে ঐ বছর পহেলা বৈশাখে হোম কীর্ত্তণ ও পূজার ব্যবস্থা করা হয় ভারতবর্ষের অনেক এলাকায়। পরবর্তীকালে যখন পাকিস্তান সরকার পূর্বপাকিস্তানে রবীন্দ্রসংগীতের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারী করে তখন এই অন্যায় আচরণের জবাব দিতে ছায়ানট সংগঠন ১৯৬৭ সালের পহেলা বৈশাখ রমনার বটমূলে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘এসো হে বৈশাখ এসো এসো’গানটি দিয়ে পহেলা বৈশাখ উদযাপন শুরু করে। মুলত এই দিনটি থেকেই পহেলা বৈশাখ বাঙালাদেশী সংস্কৃতির প্রধান পরিচায়ক রূপে আবির্ভূত হয়। ইসলামের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে মৌলবাদীরা নববর্ষ উদযাপন না করার জন্য নানা কুটচাল চেলেছে সেই প্রথম থেকে। বোমা পর্যন্ত মেরেছে ছায়ানটের অনুষ্ঠানে। এবার তাদের সাথে যোগ দিয়েছে ফেইসবুক ভিত্তিক মৌলানারা যারা ফেইসবুক পোস্টের মাধ্যমে আল্লাহতালার নেকী আদায়ে অধিক ব্যস্ত। কেউ যদি বাঙ্গালিয়ানা আর ধর্মীয় অনুশাসনের সামঞ্জস্যটা না রাখতে পারে তবে সে আসলেই দুর্ভাগা।
সবাইকে নববর্ষের গরম গরম শুভেচ্ছা। আক্ষরিক আর্থেই!
এবারো ইলিশ মাছের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে কয়েক গুন।মাছের ব্যবসায়ীরা বেশ একটা কোপ মেরেছেন ভোক্তা শ্রেণীর উপর। শহুরে ভোক্তারাও প্রেস্টিজ ইস্যুতে কিনছেন ইলিশ মাছ যদিও রেডিও টিভিতে ব্যাপক প্রচারণা চালানো হয়েছে না কেনার জন্য। আবহমানকাল থেকে পহেলা বৈশাখের সঙ্গে এই ইলিশের কোনদিন সম্পর্ক ছিলো না।এটা নিতান্তই শহুরে মানুষের নব্য আবিষ্কার।
এখন বাঙালি সংস্কৃতির সবচেয়ে বড় উৎসব পহেলা বৈশাখ। সারা বিশ্বের বাঙ্গালীরাই বাংলা নববর্ষ পালন করে ধুমধাম করে।স্বতন্ত্র ঐতিহ্য ও প্রচলিত আনন্দমুখরতার বাইরে এই উৎসবটির কিছু বাণিজ্যিক দিক আছে। যেমন কাপড়, অলঙ্কার এবং খাবার ব্যবসায়ীদের কাছে পহেলা বৈশাখ বেশ রমরমা নগদ প্রাপ্তির ব্যাপার। বৈশাখ আসার প্রায় এক মাস আগ থেকেই নতুন ডিজাইনের পোশাক ও অলংকার নিয়ে পশরা বসান ব্যবসায়ীরা। পহেলা বৈশাখে অবধারিতভাবে শহরে ও গ্রামে কুটির শিল্প সহ বিভিন্ন পণ্যের মেলা বসে যেখানে ব্যবসায়ীরা তাদের পণ্য সামগ্রী গ্রাহকদের সামনে আকর্ষণীয় ভাবে উপস্থাপন করেন। বিক্রি হয় ব্যাপক। কাঠ, বাঁশ, বেত ও মাটির তৈরি হস্তশিল্প হয়ে উঠে মুল। নামকরা হোটেল ও রেস্টুরেন্টগুলিতে বিশেষ খাবারের ব্যবস্থা রাখা হয়। লক্ষ্য তাদের যতো না নববর্ষকে বরণ, তার চেয়ে অনেক বেশী আর্থিক।
গ্রামের চিত্র ভিন্ন। প্রযুক্তিগত অগ্রগতি হলেও এখনও নববর্ষের পহেলা বৈশাখের দিনে গ্রামের দোকানদার ও ব্যবসায়ীরা ঐতিহ্যগত বাণিজ্যিক চর্চা করেন ও সনাতন নীতি পালন করেন। যে সমস্ত গ্রাহকেরা বাঁকীতে পন্য সামগ্রী ক্রয় করে, তাদের বকেয়া পরিশোধের জন্য ভোজের আমন্ত্রণ জানানো হয়। প্রচলিত নিয়ম অনুসারে গ্রাককেরা ভোজের পর তাদের বকেয়া পরিশোধ করেন।
কখন থেকে পহেলা বৈশাখ উৎসব? আর ইংরাজী ও হিজরি সন থাকাতেও কেন প্রয়োজন হলো বাংলা সনের? আসলে মোগল সম্রাট আকবরের সিংহাসনে আরোহনের দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে তার রাজস্ব র্কমর্কতা আমির ফতেহউল্লাহ সিরাজী বৈশাখকে উৎসব হিসেবে পালন করার নির্দেশ দেন।তখন স্বল্প মাত্রায় পালন হতো বৈশাখ। এরপর মোগল সম্রাট জাহাঙ্গীরের নির্দেশে সুবদোর ইসলাম খা চিশতি ঢাকা কে যখন রাজধানী হিসেবে গড়ে তুললেন, তখন থেকে রাজস্ব আদায় ও ব্যবসা বাণিজ্যের হিসাব-নিকাশ শুরু করার জন্য বাংলা সনের উপর জোর দেয়া হয়। তখন সাধারন মানুষদের চৈত্র মাসের শেষ দিনের মধ্যে সব খাজনা, মাশুল ও শুল্ক পরিশোধ করতে হতো। এর পরদিন অর্থাৎ পহেলা বৈশাখে জমির মালিকরা নিজ নিজ অঞ্চলের অধিবাসীদেরকে মিষ্টি দিয়ে আপ্যায়ন করতেন, আয়োজন করতেন বিভিন্ন উৎসবের। সম্রাট আকবরের অনুকরণে সুবদোর ইসলাম চিশতি তার বাসভবনের সামনে সব প্রজার শুভ কামনা প্রত্যাশা করে মিষ্টি বিতরণ এবং বৈশাখ উৎসব পালন করতেন। সেখানে সরকারি কর্মচারী থেকে শুরু করে জমিদার, কৃষক ও ব্যবসায়ীরা উপস্থিত থাকত। প্রজারা খাজনা নিয়ে আসত । খাজনা আদায় ও হিসাব-নিকাশের পাশাপাশি চলত মেলায় গান-বাজনা, গরু-মোষের লড়াই, কাবাডি খেলা ও হালখাতা অনুষ্ঠান। তখন থেকে ধীরে ধীরে পহেলা বৈশাখ উৎসবের দিন হিসেবে মুখ্য হয়ে উঠে।সম্রাট আকবর ও সম্রাট জাহাঙ্গীর নিশ্চয়ই ভাবেননি তারা ভবিষ্যৎ জাতির জন্য ধর্ম নিরপেক্ষ একটা উৎসবের ভিত্তি করে যাচ্ছেন।
বঙ্গাব্দের বারো মাসের নামকরণ করা হয়েছে নক্ষত্রমন্ডলে চন্দ্রের আবর্তনে বিশেষ তারার অবস্থানের উপর ভিত্তি করে। নামগুলো নেয়া হয়েছে জ্যোতির্বিজ্ঞান বিষয়ক গ্রন্থ ‘সূর্যসিদ্ধান্ত’থেকে। বৈশাখ নামটি এসেছে বিশাখা নক্ষত্রের নামানুসারে।
আধুনিক বাংলা নববর্ষ উদযাপন প্রথম পালন করা হয় হয় ইংরাজী ১৯১৭ সালে। প্রথম মহাযুদ্ধে ব্রিটিশদের বিজয় কামনা করে ঐ বছর পহেলা বৈশাখে হোম কীর্ত্তণ ও পূজার ব্যবস্থা করা হয় ভারতবর্ষের অনেক এলাকায়। পরবর্তীকালে যখন পাকিস্তান সরকার পূর্বপাকিস্তানে রবীন্দ্রসংগীতের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারী করে তখন এই অন্যায় আচরণের জবাব দিতে ছায়ানট সংগঠন ১৯৬৭ সালের পহেলা বৈশাখ রমনার বটমূলে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘এসো হে বৈশাখ এসো এসো’গানটি দিয়ে পহেলা বৈশাখ উদযাপন শুরু করে। মুলত এই দিনটি থেকেই পহেলা বৈশাখ বাঙালাদেশী সংস্কৃতির প্রধান পরিচায়ক রূপে আবির্ভূত হয়। ইসলামের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে মৌলবাদীরা নববর্ষ উদযাপন না করার জন্য নানা কুটচাল চেলেছে সেই প্রথম থেকে। বোমা পর্যন্ত মেরেছে ছায়ানটের অনুষ্ঠানে। এবার তাদের সাথে যোগ দিয়েছে ফেইসবুক ভিত্তিক মৌলানারা যারা ফেইসবুক পোস্টের মাধ্যমে আল্লাহতালার নেকী আদায়ে অধিক ব্যস্ত। কেউ যদি বাঙ্গালিয়ানা আর ধর্মীয় অনুশাসনের সামঞ্জস্যটা না রাখতে পারে তবে সে আসলেই দুর্ভাগা।
সবাইকে নববর্ষের গরম গরম শুভেচ্ছা। আক্ষরিক আর্থেই!
Comments