এগারসিন্দুর দুর্গ |
সেই সময় আহমেদ ফজল নামে এক ক্ষ্যাপাটে মিউজিশিয়ান ও তার ব্যান্ড নোভা ইতিহাস নিয়ে অনেক গান বেধেছিলো। তার একটা ছিল ঈশা খাঁর বীরত্বকে নিয়ে। নোভা ছাড়া বাংলাদেশী আর কোনো শিল্পী ইতিহাসের এতো ভেতরে কখনো যাননি। এই ফজলই সাংস্কৃতিক অঙ্গন থেকে সর্বপ্রথম চিৎকার করে বলেছিলেন রাজাকারের তালিকা চাই। সাল ছিল ১৯৮৯। এর আগে এতো বলিষ্ঠভাবে রাজাকারদের বিরুদ্ধে কিছু বলা হয়নি। সে অন্য গল্প।
তো সেই সময় রওণক করিম ম্যাডাম ইতিহাসের পোকা ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন মাথায়। এখনো গোগ্রাসে গিলছি ইতিহাস।তখন থেকে মোঘল বশ্যতা অগ্রাহ্য করা ঈশা খাঁ আমার সুপার হিরো। রিয়েল ওয়ারিওর। মোঘলরা যখন ভারতের প্রায় সকল এলাকা গিলে নিয়েছিল, তখন এই ঈশা খাঁ গিলতে দেননি বাংলার কিছু অঞ্চল। মুঘল সেনাপতি মানসিংহকে ঘোল খাইয়েছেন বার বার।
অনবরত যুদ্ধ থেকে রেহাই পেতে ঈশা খাঁ ও মানসিংহ এক সময় ঠিক করলেন মুখোমুখি তরবারি যুদ্ধে লিপ্ত হবেন। স্থান ঠিক হল- টোপনগর। যুদ্ধের দিন মানসিংহ মুঘল কুটচাল দিলেন। পাঠালেন তার সবচেয়ে ক্ষীপ্র যোদ্ধাকে। তেজস্বী ঈশা খাঁ হারিয়ে দিলেন সেই যোদ্ধাকে। সুরক্ষা মুকুট খুলে ফেললেন। দেখলেন এ মানসিংহ না। ধিক্কার দিলেন মানসিংহ আসেননি বলে। চিৎকার করে বললেন- মানসিংহ পুরুষ হলে কাল একই জায়গায় যেন আসেন।
পরদিন মানসিংহ এলেন। ঈশা খাঁ পরাজিত করলেন মানসিংহকে। মানসিংহের তরবারি ভেঙে গেলে ঈশা খাঁ নিজের তরবারি বাড়িয়ে দিলেন। মানসিংহ আর কোনো যুদ্ধ না করবার আকাঙ্খা প্রকাশ করে জড়িয়ে ধরলেন ঈশা খাঁকে। এরপর সম্রাট আকবর ঈশা খাঁকে বাইশ পরগনার শাসক নিয়োগ করেন এবং ‘মসনদে আলী’ উপাধিতে ভূষিত করেন।
যদিও মনে করা হয় ঢাকার অদূরে সোনার গাঁ ঈশা খাঁর স্মৃতি বিজরিত। কিন্তু ঈশা খাঁর ছোঁয়া বেশি পাওয়া যায় বৃহত্তর কিশোরগঞ্জের নানা এলাকায় – এগারসিন্দুর, টোপনগর, জঙ্গল বাড়ী। কখনো যাওয়া হয়নি। এবার হলো। সব ঘুরে জঙ্গলবাড়ি যেতে সন্ধ্যা হয়ে গেলো। তারপরও কিছু সময় কাটালাম সেখানে। স্পর্শ করে দেখলাম দালান গুলো।
ঈশা খাঁকে নিয়ে একটা গল্প লেখার ইচ্ছা আছে, মাথায় ঘুরছে সেটা অনেক দিন ধরেই। লেখা হচ্ছে না কেন যেন।এবার হয়তো হবে।
জঙ্গল বাড়ী |
জঙ্গল বাড়ী |
জঙ্গল বাড়ী |
জঙ্গল বাড়ী |
Comments