রাজনৈতিক অস্থিরতা, জঙ্গি ট্রেড-ইউনিয়ন আন্দোলন, উৎপাদনহীনতা ও অর্থনৈতিক অবক্ষয়ের ফলে ১৯৫৪ সালের পর থেকে গৌরব হারাতে থাকে কলকাতা। তবে ২০০২ সাল থেকে কলকাতা আবার সাংস্কৃতিক হৃতগৌরব এবং বাণিজ্যিক সমৃদ্ধি ফিরে পেতে থাকে নতুন প্রজন্মের হাত ধরে।
কলকাতা নামের ইতিহাস বেশ কৌতূহলোদ্দীপক। 'কলিকাতা' নামটি এসেছে ফার্সিতে গৃহীত দুটি আরবি শব্দের সংযোগে - 'কলি' যার মানে অস্থির, এবং 'কাতা' যার মানে বদমাইসের দল বা খুনেরা। নামটি খুবই সঙ্গত কারণ প্রাচীন সময়ে গঙ্গার আসেপাশে জলদস্যু ও ডাকাতরা পালিয়ে থাকতো। অনেক পরে ব্রিটিশ শাসকরা এর নাম দিয়েছিলো ক্যালকাটা - Calcutta। ২০০১ সালে ভারত সরকার পুনরায় নাম বদলে করে কলকাতা। কিন্তু শহরটি এখনো যতটা না ভারতীয় তার চেয়ে বেশী ব্রিটিশ।
স্যার রোনাল্ড রস, সি ভি রমন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, অমর্ত্য সেন এবং মাদার তেরেসা - টোকিও ও কিয়োটোর পর কলকাতা শহর এশিয়ার সবচেয়ে বেশী নোবেল বিজয়ী উপহার দিয়েছে।
বাংলাদেশের মানুষকে কলকাতার বাঙ্গালীরা আলাদা কদর করে। বয়সীরা এখনো ডাকে ‘জয় বাংলার লোক’ বলে। তাদের বিস্ময় কাটেনি যে মাছে ভাতে বাঙালী যুদ্ধ করে নিজেদের জন্য একটা গোটা দেশকেই স্বাধীন করে ফেলেছে । আর retail বাণিজ্যে বাংলাদেশের মানুষ সবসময়ই কলকাতার অন্যতম প্রধান ভোক্তা।
বাঙ্গালী এবং অবাঙ্গালী – সব বই প্রেমিকদের জন্য কলকাতা মোটামুটি স্বর্গরাজ্য। কলেজ স্ট্রিটের বইপাড়া সারা বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম বইয়ের বাজারে হিসেবে গন্য হয়। হেনো কোন বই নেউ যা এখানে পাওয়া যায় না। ঠিকভাবে অনুসন্ধান করলে অনেক দুর্লভ বইয়ের প্রথম সংস্করণও নাকি খুজে পাওয়া যায় এখানে। কেউ কেউ বলেন যদি কোন বই কলেজ স্ট্রিটে খুজে না পাওয়া যায়, তাহলে ঐ বইয়ের অস্তিত্বই বোধহয় নেই। ১৯৬০-এর দশকের শেষের দিকে পশ্চিমবঙ্গের নকশাল আন্দোলনের অনেক ইতিহাস জমা আছে এই এলাকায়। এর কারণ কলকাতার প্রথম সারির কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এই এলাকায় অবস্থিত। ১৯৪০এর দশকে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র আন্দোলনের সুবাদে এখানে নিয়মিত আসতেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। আবার সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান পড়াশুনা করেছেন হেয়ার স্কুলে।
কলকাতা হয়তো বিশ্বের বিরল শহরগুলোর মধ্যে অন্যতম যেখানে এক সাথে ট্রাম এবং মেট্রো দুইটাই রয়েছে। ১৮৯৮ সালে প্রতিষ্ঠিত ‘কলকাতা ফুটবল লিগ’ এশিয়ার প্রাচীনতম ফুটবল টুর্নামেন্ট এবং বিশ্বের দ্বিতীয় প্রাচীনতম ফুটবল টুর্নামেন্ট। ১৮৩৫ সালে প্রতিষ্ঠিত কলকাতা মেডিকেল কলেজ এশিয়ার প্রাচীনতম মেডিকেল স্কুল। তবে ঐতিহাসিক বিচারে কলকাতা খুব একটা প্রাচীন নয়, বাণিজ্যিক ভাবে এখন খুব গুরুত্বপূর্ণও নয়, তবে কৃষ্টি ও সভ্যতার আলোকে উপমহাদেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শহর এই কলকাতা। ‘বাঙ্গালীপনা’র বেশ অনেকটার শুরু এবং বিকাশ এই কলকাতাতে।
Comments