Skip to main content

কলকাতা ডায়রী



টয়োটা নেই। ঢাকার রাস্তায় লক্ষ লক্ষ টয়োটা দেখে দেখে হঠাৎ কলকাতায় এসে কোন টয়োটা না দেখে চোখ দুটো ধাক্কা খেলো। কলকাতায় টয়োটা হাতে গুনা যায়। ইন্ডিয়া মেইড গাড়ী ছাড়া জাপানীস হোন্ডা আছে অনেক। আর আছে আমেরিকান অনেক শেভ্রোলেট; এই দেশে মনে হয় শেভ্রোলেটের ফ্যাক্টরি আছে।

ভাষা একটা সমস্যা। মনে করেছিলাম বাংলায় চলবে সব। আদতে তা না। হিন্দিই চলে বেশী, সাথে বাংলা ও ইংরেজী। দোকানে, ট্যাক্সিতে, হোটেলে, রেস্টুরেন্টে হিন্দি চলছে। বাংলায় বললে বেশ একটা সময় নিয়ে বুঝিয়ে বলতে হয়।

দুর্দান্ত পাবলিক ট্রান্সপোর্ট। শহরের এক কোন থেকে অন্য কোনে চলে যাওয়া যায় বাসে চড়ে। এয়ার কনডিসন বাস আছে, নন-এয়ার কনডিসন বাস আছে। একটু পর পর আসছে, যাচ্ছে। দ্রুত চলাচলের জন্য আছে মেট্রো। ধীর চলাচলের জন্য আছে ট্রাম। আর আছে লক্ষ লক্ষ ট্যাক্সি। হাত বাড়ালেই থামছে।

ট্যাক্সি ড্রাইভারদের মধ্যে ভালো মন্দ দুইটাই আছে। আমার অভিজ্ঞতা ফিফটি ফিফটি। আবার খুব ভালোও পেয়েছি দুইবার যারা কিনা এক জায়গায় নামিয়ে দেবার পর আমার জন্য অপেক্ষা করেছে কিন্তু ভাড়া বেশী নেয়নি এবং কিভাবে আরও সাশ্রয় হবে তা বলে দিয়েছে।

ট্যাক্সি ড্রাইভার একটাও বাঙ্গালী পাইনি। রিকসাওয়ালাও না, বাসের হেল্পারও না।

পার্কস্ট্রিটের প্রধান ভোক্তা বাংলাদেশীরা। পার্কস্ট্রিটের দোকানদারদের কাছে বাংলাদেশীদের কদর অন্যরকম। তাদের প্রধান ভোক্তাও বোধহয় বাংলাদেশীরা। তারা বিস্ময় কাটেনা কিভাবে বাংলাদেশের মধ্যবিত্ত এতটা বিত্তশালী হয়ে গেলো। পার্কস্ট্রিটে পেয়েছি বাংলাদেশের এক সফল নারী উদ্যোক্তাকে। বেশ বেক্তিক্তসম্পন্ন মহিলা। পেয়েছি বিএনপির এক চৌকশ নারী নেত্রীকে, গতবার মেম্বার অফ পার্লামেন্ট ছিলেন। বেশ আনন্দের সাথে শপিং করছেন। আমি মনে মনে ভাবলাম – এই ভালো!

কলকাতা মালটি-ডাইভারসিফাইড একটা শহর। হিন্দু, মুসলমান ও খ্রীষ্টান ধর্মের সহঅবস্থান চোখে পরার মতন। পোশাকআশাক এক এক মতালম্বির মানুষের একেকরকম। নানান ভাষা শোনা যায় সব জায়গায়। স্ট্রিটফুডেও রয়েছে ডাইভারসিফিকেসন। যে ধরনের খাবার খাইতে ইচ্ছে হলো, তাই পেলাম।
চীনারা জাকিয়ে বসেছে। কলকাতার মানুষের মুলস্রোতে চীনা মানুষের অন্তর্ভুক্তি আমার কাছে খুব ইন্টারেস্টিং লেগেছে। এখন দ্বিতীয় ও তৃতীয় প্রজন্ম বাস করছে কলকাতায়। কেন এরা ফেরত গেলো না, এটা একটা রহস্য। বেশীরভাগ চীনারা এটা-সেটার দোকান দিয়েছে অথবা খাবারের ব্যবসা চালাচ্ছে। আমি কয়েকজনকে পেয়েছি চোস্ত ইংরেজী বলছে, কয়েকজন পেয়েছি ভালো বাংলা বলছে।

শো সা, ফুটানি কম। কলকাতার মানুষের শো সা, ঠাট-বাট অনেক কম। যা দিয়ে চলছে, তাই দিয়ে চালাচ্ছে। পয়সা হলেই নতুন গাড়ী কেনা নেই, পয়সা হলেই গেজেট কেনা নেই। পয়সাওয়ালাদের বাড়ীঘরে আভিজাত্য আছে তবে নতুন জিনিষ কেনার তোরজোর নেই।

কেন কে জানে! হাতে টানা রিকশা অমানবিক মনে হয়েছে আমার কাছে। নিম্ন আয়ের মানুষদের জন্য এখন অনেক পেশা থাকা সত্ত্বেও একটা জনগোষ্ঠী এই পেশাই বেছে নিচ্ছে কেন তা বোঝতে পারিনি।

ওয়াট কলকাতা থিঙ্কস টুডে, দ্যা কান্ট্রি থিঙ্কস টুমরো। এর সবচেয়ে বড় নমুনা মেট্রো। কলকাতা করেছে আশির দশকে, দিল্লি করেছে ১০ বছর আগে, মুম্বাই করছে এখন। কলকাতার শিল্প সাহিত্য এখনো পুরো ইন্দিয়ার মধ্যে শীর্ষস্থানীয়।

উত্তরাধিকারহীন ঠাকুরবাড়ী। জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ী যেয়ে উপলব্ধি করলাম বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কোন উত্তরাধিকারী নেই। তার  তিন মেয়ে ও দুই ছেলে ছিল। বড় মেয়ে মাধুরীলতা দেবী নিঃসন্তান ছিলেন। বড় ছেলে রথীন্দ্রনাথ ঠাকুর যিনি ১৯৫১ থেকে ২২ আগস্ট ১৯৫৩ পর্যন্ত বিশ্বভারতী বিশ্ব্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ছিলেন, তিনিও নিঃসন্তান ছিলেন তবে এক মেয়েকে দত্তক নিয়েছিলেন। তৃতীয় সন্তান রেনুকা দেবীও নিঃসন্তান ছিলেন। সবচেয়ে ছোট ছেলে সমীন্দ্রনাথ মাত্র ১০ বছর ১১ মাস বয়সে মারা যান। একমাত্র ছোট মেয়ে মীরা দেবীর এক ছেলে ও এক মেয়ে ছিল। ছেলে নিতীন্দ্রনাথ ২০বছর বয়সে মারা যান আর মেয়ে নিঃসন্তান নন্দিতা কৃপালানি  মারা যান ৫১ বছর বয়সে। রথীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দত্তক নেয়া মেয়ে নন্দিনী ঠাকুরের কোন খোজ পাওয়া যায় না। 

যাচ্ছে তাই ম্যাকডোনাল্ড’স। কলকাতার ম্যাকডোনাল্ড’স একদম মজা না। প্রতিটা আইটেমই ভারতীয়। সাবওয়ে ভালো।

রাস্তায় প্রচুর জ্যাম, প্রচুর হর্নের শব্দ। তবে সবাই ট্রাফিক আইন মানছে। ঘন ঘন লেইন পরিবর্তন নেই। 


ব্রিটিশদের ভালবাসা। ব্রিটিশরা নিশ্চিত ভাবেই কলকাতাকে প্রবল ভাবে ভালোবেসে ফেলেছিল। তাদের বানানো বিশাল বিশাল অট্টালিকাগুলো এখনো দাড়িয়ে আছে স্বকীয় রুপ নিয়ে। ডালহৌসি স্কয়ারে যেয়ে মনে হয়েছে আমি ১৮৯০ সালে চলে এসেছি।

আঞ্জন দত্তের কলকাতা। আমি হেটেছি এক এলাকা থেকে অন্য এলাকা আর অঞ্জন দত্তের গানে উল্লেখ করা রাস্তা গুলো খুজে পেয়ে এক অস্থির ধরনের আন্নন্দ পেয়েছি। অঞ্জন দত্ত যে আমার উপর এতটা প্রভাব ফেলেছেন, আগে উপলব্ধি করিনি কখনো।  


কফি হাউস আছে আগের মতন। কলেজ স্ট্রিটের কফি হাউসে বসে এক কাপ কফি আর ফিশ ফ্রাই খাবার সময় আমার গুসবাম্ব হচ্ছিল। মান্না দে এখানে একবারও আসেননি তবে সত্যজিৎ রায় নাকি প্রায় এসে এক কোনায় বসে নিজের মাঝেই নিমগ্ন হয়ে থাকতেন। বঙ্গবন্ধুও চল্লিশের দশকে ছাত্ররাজনীতির হাত ধরে এসেছেন কিছুদিন।

Comments

Popular posts from this blog

Dhaka in the 1950s and 1960s

In the mid 1950s, Dhaka, known as ‘Dacca’ at that time, was just a small provincial town with about 3,00,000 inhabitants. Dhanmondi at that time just started to grow; Maulvi Abdus Sobhan's family had some habitation in Sobhanbagh, Dhaka Stadium was being constructed to host cricket matches and New Market was starting to become a busy shopping area. Dhaka residents loved cinema since the time it was introduced. Baliadi Siddiki family owned Nishat Cinema Hall and held a mega event when the film ‘Aan’ by Mehboob Khan was released in 1952. Elephants were used by the hall owner to distribute leaflets and to spray colour water. There was another prominent hall named Britannia near Rex Restaurant at Gulistan but was closed down in the late 1950s. Gulistan Cinema Hall, city’s first modernity landmark, came up in 1952. Amber, started with Raj Kapoor and Nargis, was the first film the hall showed. Mukul which later became 'Azad 'used to show Bengali films from Kolkat

সুন্দর পশু-পাখি, সুন্দর গাছ আর সুন্দর সুন্দর জঙ্গল নিয়ে সুন্দরবন

...প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় এদেশের মানুষের পক্ষ হয়ে বর্ম হিসেবে দাড়িয়ে যাওয়া সুন্দরবনের সাথে বেশীর ভাগ মানুষের প্রথম পরিচয় হয় বাংলা ১ম পত্রের গদ্য বইয়ে অথবা বাংলা ২য় পত্রের রচনায়। সুন্দরবন - এর আক্ষরিক অর্থ 'সুন্দর জঙ্গল' অথবা 'সুন্দর বনভূমি' কিন্তু নামকরণ হয়েছিল 'সুন্দরী গাছ' থেকে যা এখানে প্রচুর পরিমানে জন্মে। তবে যেহেতু স্থানীয় আদিবাসীরা অনেক আগে থেকে বনটিকে ‘চন্দ্র-বান্ধে’ নামে ডাকতো তাই হতে পারে ‘চন্দ্র-বান্ধে’ নামটি কালের পরিক্রমায় ‘সুন্দরবন’ হয়ে গেছে। বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেষে অবস্থিত এই বনের বাঘ ‘রয়েল বেঙ্গল টাইগার’ নামে পরিচিত যদিও সংখ্যায় এখন এ প্রাণী ক্রমনিম্নগামী। সুন্দরবন সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকায় অবস্থিত হবার কারনে এখানকার পানি নোনতা এবং এই লবণাক্ততার কারণে বাঘ অস্বস্তিকর অবস্থায় থাকে যা তাদের বেশ আগ্রাসী করে তোলে তাই  মাছ ও মধু সংগ্রহকারী মানুষদের উপর সুযোগ পেলে তারা ঝাপিয়ে পরে। ১৭৫৭ সালে পুরো বাংলার ইজারা নেয় বৃটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি যার মধ্যে সুন্দরবনও ছিল। এই বনের গুরুত্ব বুঝতে পেরে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি একটা মানচিত্র তৈরি করে সেইসময়

Revolt at BDR Headquarters

Soldiers of the BDR Headquarters in Dhaka staged a revolt against their top officers including the DG. Rumors are all around. Some say, the DG is dead. Others include - soldiers want pay raise; they want full scale war against Indian BSF etc. But here is the rumor that beats all by a long margin - JMB naki actually BDR HQ attack korse. Next target High Court. Ora naki BDR DG ke convince korse to join them!