১২১৫ সালে পারস্যের খাওয়ারিজম সম্ভবত বিশ্বের সবচেয়ে সমৃদ্ধ রাষ্ট্র ছিল। সম্রাট ছিলেন ইসলাম ধর্মে বলিয়ান আলা আদ-দীন মুহাম্মদ। আজকের ইরাক, ইরান, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান তার সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল। রাজধানী ছিল সমরকন্দ। তখন ছিল ইসলামের তথাকথিত রেনেসাঁ যুগ। খাওয়ারিজম সৈন্যবাহিনীতে প্রায় পাঁচ লাখ সুসজ্জিত অশ্বারোহী সৈন্য ছিল যার প্রতিটি সৈন্য এবং ঘোড়া উচ্চ মানের অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত থাকতো। খাওয়ারিজম সাম্রাজ্যের একটা বড় আয় আসতো সিল্ক রোড থেকে সংগৃহীত ট্যাক্সের মাধ্যমে। চীন ও ইউরোপের একমাত্র গমনপথ ছিল খাওয়ারিজম তাই প্রতিটি বণিক তাদের রাস্তা ব্যবহার করার জন্য ও যাত্রা পথে নিরাপত্তা দেবার জন্য খাওয়ারিজম সম্রাটকে দক্ষিণা প্রদান করতো। সেই সময় মঙ্গোলিয়া শাসন করতেন চেঙ্গিস খান। চেঙ্গিস খান আলা আদ-দীন মুহাম্মদকে খুশী রাখার জন্য প্রায়ই মূল্যবান উপহার পাঠাতেন।
হঠাৎ করে একদিন আলা আদ-দীন মুহাম্মদ একদল মঙ্গোলিয়ান বণিকদের আটক করেন এই সন্দেহে যে তারা গুপ্তচর এবং বহিরাগত পণ্য ট্যাক্স না দিয়ে ইউরোপে নিয়ে যাচ্ছে। সভাপরিষদ আলা আদ-দীন মুহাম্মদের কাছে এর যথার্থতা জানতে চাইলে ধার্মিক সম্রাট বলেন সৃষ্টিকর্তা তাকে স্বপ্নে মঙ্গোলীয়দের ব্যাপারে সাবধান করেছেন।
আপাদমস্তক ধর্ম নিরপেক্ষ চেঙ্গিস খান বণিকদের আটকের খবর পেয়ে রাষ্ট্রদূত সহ প্রায় পঞ্চাশ জন মোঙ্গলিয়ান এবং পণ্ডিত পাঠান আলা আদ-দীন মুহাম্মদের কাছে। দাম্ভিক ও আত্মপ্রত্যয়ী আলা আদ-দীন মুহাম্মদ কয়েক সপ্তাহ তাদের অপেক্ষায় রেখে পরে সাক্ষাত দেন। সম্রাট সাক্ষাত দিলে প্রতিনিধিদল বিনীত ভাবে আটক বণিকদের মুক্তি প্রত্যাশা করেন এবং বাজেয়াপ্ত পণ্য ফেরত চান। খাওয়ারিজম সম্রাট দাবী অগ্রাহ্য করেন এবং তার সেনাবাহিনীকে নির্দেশ দেন প্রতিনিধিদলের সবার দাড়ীতে আগুন লাগিয়ে দেবার জন্য। সম্রাটের সামনেই এই নির্দেশ বাস্তবায়িত করা হয়। আহত অবস্থায় তাদের বলা হয় যত দ্রুত পারে তারা যেন নিজ দেশে চলে যায়। শুধু প্রতিনিধি দলের প্রধান-রাষ্ট্রদূতকে সম্রাট আলা আদ-দীন মুহাম্মদ শিরশ্ছেদ করেন এবং কাটা মাথা চেঙ্গিস খানের কাছে পাঠিয়ে দেন। প্রতিনিধি দল ফিরে গিয়ে চেঙ্গিস খানকে এ ঘটনা জানালে চেঙ্গিস খান বুঝতে পারেন না কেন খাওয়ারিজম সম্রাট এই আচরন করছেন। মঙ্গোলিয়রা কখনই ঐ সাম্রাজ্যকে হুমকি দেয়নি, সব সময় ট্যাক্স দিয়েছে এবং আলা আদ-দীন মুহাম্মদকে যথাযত সম্মান দিয়েছে।
আলা আদ-দীন মুহাম্মদ মঙ্গোলীয় পর্বতের পাশে রাখা তার সৈন্যবাহিনীকে সতর্ক করে দেন। নির্দেশ দেন মঙ্গোলীয় সৈন্য এলে কঠোর হাতে দমন করার জন্য। কিন্তু কোন মঙ্গোলীয় সৈন্য বাহিনী প্রতিশোধ নিতে আসেনি। তিন বছর কিছুই ঘটেনি। আলা আদ-দীন মুহাম্মদ এবং খাওয়ারিজম সৈন্যবাহিনীর সৃতিতে ঘটনাটা ফিকে হয়ে আসছিল। চেঙ্গিস খান আঘাত হানেন ১২১৯ সালে। প্রায় এক লক্ষ সৈন্যবাহিনী নিয়ে তিনি অপ্রতিরোধ্যভাবে খাওয়ারিজমে প্রবেশ করেন। অত্যন্ত ক্ষিপ্রতার সাথে ছিন্নভিন্ন করে দেন আলা আদ-দীন মুহাম্মদের সাম্রাজ্য। নৃশংস ভাবে হত্যা করতে থাকেন খাওয়ারিজম সৈন্যবাহিনী ও সাধারণ জনগণকে। মাত্র এগারো মাসের মধ্যে খাওয়ারিজমের চার লাখ সৈন্য হত্যা করেন চেঙ্গিস খান, দাসে পরিনত করেন বাকি এক লাখ। খাওয়ারিজম সাম্রাজ্যের এ মাথা থেকে ও মাথা সব শহর গুড়িয়ে দেন তিনি। সমরকন্দের বাগান এবং প্রাসাদ সমতল করে দেওয়া হয়, অগণিত ঐতিহাসিক শিল্পকর্ম এবং নথি ধ্বংস করা হয়। চেঙ্গিস খান তিন চতুর্থাংশ জনগণকে হত্যা করেন এবং বাকীদের দারিদ্রতা ও ক্ষুধার মধ্যে থাকতে বাধ্য করেন। একটি সমৃদ্ধ জনপদ এক বছরের মাথায় কৃষক ও পশুপালকবিহীন অধ্যুষিত একটি পতিত জমিতে রূপান্তরিত হয়। তাড়া খেয়ে সম্রাট আলা আদ-দীন মুহাম্মদ ইদুরের মতন পালিয়ে যান একটি দূরবর্তী দ্বীপে। কিছুদিনের মধ্যে তিনি আতঙ্কে মারা যান কারণ পালানোর সময় তিনি দেখেছেন মঙ্গোলীয়দের রেখে যাওয়া ধ্বংসস্তূপ। মারা যাবার আগে তার হিস্টিরিয়া হয়ে যায়।
আলা আদ-দীন মুহাম্মদের অহম ও অদূরদর্শিতার মূল্য দেয় একটা সাম্রাজ্য, একটা সভ্যতা, লাখ লাখ মানুষ।
চেঙ্গিস খান সংক্রান্ত কিছু তথ্যঃ
চেঙ্গিস খানকে মানা হয় পৃথিবীর সর্বকালের সর্ববৃহৎ ও অবিচ্ছিন্ন সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা। ১২২৭ সালে তার মৃত্যুর সময় পীত সাগর থেকে শুরু করে ইরান, ইরাক, এবং দক্ষিণ রাশিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল তার সাম্রাজ্য। সাম্রাজ্যের বিস্তৃতি ছিল এক কোটি তিরানব্বই লক্ষ বর্গকিলোমিটার। এই সাম্রাজ্য তিনি তৈরি করেছিলেন মাত্র ২১ বছরে (১২০৬-১২২৭)।
চেঙ্গিস খানে বিশ্বের প্রথম আন্তর্জাতিক ডাকবিভাগ চালু করেন।
চেঙ্গিস খান সাফল্যের সাথে ধর্ম নিরপেক্ষ ও প্রগতিশীল সমাজ গড়ে তুলেছিলেন। তবে যুদ্ধ ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন নির্মম ও রক্তপিপাসু।
১২০১ সালে তাইজুত গোত্রের সাথে এক যুদ্ধে চেঙ্গিস খান তীরবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছিলেন। যুদ্ধের পর ঝিবি নামে এক যোদ্ধা তার কাছে এসে বলে ”গতকাল আমার তীরেই আপনি আহত হয়েছিলেন। আপনি যদি আমাকে বাচিয়ে রাখেন তবে আমি আপনার সৈন্যবাহিনীতে যোগ দিতে চাই।” চেঙ্গিস ঝিবির সততায় মুগ্ধ হয়ে তার ইচ্ছা পূরণ করেন এবং নাম দেন ‘জেবে’ বা ‘তীর’। এই জেবে পরে মঙ্গোল সেনাবাহিনীর অন্যতম প্রধান সেনাপতির মর্যাদা লাভ করে এবং ইউরোপ আক্রমণ করে।
ধর্মান্ধতা মধ্যযুগের প্রচলিত প্রথা ছিল। কিন্তু চেঙ্গিস খানের শাসনাধীন এলাকা সম্পূর্ণ ধর্মনিরপেক্ষ ছিল। সবাই যেন স্বাধীনভাবে যার যার ধর্ম পালন করতে পারে সেজন্য চেঙ্গিস খান আনুষ্ঠানিক ফরমান জারি করেছিলেন।
একবার চেঙ্গিস খানের শাসনের আওতায় যেসব জনপদ এসেছে তারা অন্য যে কোন স্থানের তুলনায় অনেক বেশী নিরাপদ ও এবং স্বাধীন ছিলো। সেই মধ্যযুগে তার সাম্রাজ্যে নারী-স্বাধীনতা ছিল।
হঠাৎ করে একদিন আলা আদ-দীন মুহাম্মদ একদল মঙ্গোলিয়ান বণিকদের আটক করেন এই সন্দেহে যে তারা গুপ্তচর এবং বহিরাগত পণ্য ট্যাক্স না দিয়ে ইউরোপে নিয়ে যাচ্ছে। সভাপরিষদ আলা আদ-দীন মুহাম্মদের কাছে এর যথার্থতা জানতে চাইলে ধার্মিক সম্রাট বলেন সৃষ্টিকর্তা তাকে স্বপ্নে মঙ্গোলীয়দের ব্যাপারে সাবধান করেছেন।
আপাদমস্তক ধর্ম নিরপেক্ষ চেঙ্গিস খান বণিকদের আটকের খবর পেয়ে রাষ্ট্রদূত সহ প্রায় পঞ্চাশ জন মোঙ্গলিয়ান এবং পণ্ডিত পাঠান আলা আদ-দীন মুহাম্মদের কাছে। দাম্ভিক ও আত্মপ্রত্যয়ী আলা আদ-দীন মুহাম্মদ কয়েক সপ্তাহ তাদের অপেক্ষায় রেখে পরে সাক্ষাত দেন। সম্রাট সাক্ষাত দিলে প্রতিনিধিদল বিনীত ভাবে আটক বণিকদের মুক্তি প্রত্যাশা করেন এবং বাজেয়াপ্ত পণ্য ফেরত চান। খাওয়ারিজম সম্রাট দাবী অগ্রাহ্য করেন এবং তার সেনাবাহিনীকে নির্দেশ দেন প্রতিনিধিদলের সবার দাড়ীতে আগুন লাগিয়ে দেবার জন্য। সম্রাটের সামনেই এই নির্দেশ বাস্তবায়িত করা হয়। আহত অবস্থায় তাদের বলা হয় যত দ্রুত পারে তারা যেন নিজ দেশে চলে যায়। শুধু প্রতিনিধি দলের প্রধান-রাষ্ট্রদূতকে সম্রাট আলা আদ-দীন মুহাম্মদ শিরশ্ছেদ করেন এবং কাটা মাথা চেঙ্গিস খানের কাছে পাঠিয়ে দেন। প্রতিনিধি দল ফিরে গিয়ে চেঙ্গিস খানকে এ ঘটনা জানালে চেঙ্গিস খান বুঝতে পারেন না কেন খাওয়ারিজম সম্রাট এই আচরন করছেন। মঙ্গোলিয়রা কখনই ঐ সাম্রাজ্যকে হুমকি দেয়নি, সব সময় ট্যাক্স দিয়েছে এবং আলা আদ-দীন মুহাম্মদকে যথাযত সম্মান দিয়েছে।
আলা আদ-দীন মুহাম্মদ মঙ্গোলীয় পর্বতের পাশে রাখা তার সৈন্যবাহিনীকে সতর্ক করে দেন। নির্দেশ দেন মঙ্গোলীয় সৈন্য এলে কঠোর হাতে দমন করার জন্য। কিন্তু কোন মঙ্গোলীয় সৈন্য বাহিনী প্রতিশোধ নিতে আসেনি। তিন বছর কিছুই ঘটেনি। আলা আদ-দীন মুহাম্মদ এবং খাওয়ারিজম সৈন্যবাহিনীর সৃতিতে ঘটনাটা ফিকে হয়ে আসছিল। চেঙ্গিস খান আঘাত হানেন ১২১৯ সালে। প্রায় এক লক্ষ সৈন্যবাহিনী নিয়ে তিনি অপ্রতিরোধ্যভাবে খাওয়ারিজমে প্রবেশ করেন। অত্যন্ত ক্ষিপ্রতার সাথে ছিন্নভিন্ন করে দেন আলা আদ-দীন মুহাম্মদের সাম্রাজ্য। নৃশংস ভাবে হত্যা করতে থাকেন খাওয়ারিজম সৈন্যবাহিনী ও সাধারণ জনগণকে। মাত্র এগারো মাসের মধ্যে খাওয়ারিজমের চার লাখ সৈন্য হত্যা করেন চেঙ্গিস খান, দাসে পরিনত করেন বাকি এক লাখ। খাওয়ারিজম সাম্রাজ্যের এ মাথা থেকে ও মাথা সব শহর গুড়িয়ে দেন তিনি। সমরকন্দের বাগান এবং প্রাসাদ সমতল করে দেওয়া হয়, অগণিত ঐতিহাসিক শিল্পকর্ম এবং নথি ধ্বংস করা হয়। চেঙ্গিস খান তিন চতুর্থাংশ জনগণকে হত্যা করেন এবং বাকীদের দারিদ্রতা ও ক্ষুধার মধ্যে থাকতে বাধ্য করেন। একটি সমৃদ্ধ জনপদ এক বছরের মাথায় কৃষক ও পশুপালকবিহীন অধ্যুষিত একটি পতিত জমিতে রূপান্তরিত হয়। তাড়া খেয়ে সম্রাট আলা আদ-দীন মুহাম্মদ ইদুরের মতন পালিয়ে যান একটি দূরবর্তী দ্বীপে। কিছুদিনের মধ্যে তিনি আতঙ্কে মারা যান কারণ পালানোর সময় তিনি দেখেছেন মঙ্গোলীয়দের রেখে যাওয়া ধ্বংসস্তূপ। মারা যাবার আগে তার হিস্টিরিয়া হয়ে যায়।
আলা আদ-দীন মুহাম্মদের অহম ও অদূরদর্শিতার মূল্য দেয় একটা সাম্রাজ্য, একটা সভ্যতা, লাখ লাখ মানুষ।
চেঙ্গিস খান সংক্রান্ত কিছু তথ্যঃ
চেঙ্গিস খানকে মানা হয় পৃথিবীর সর্বকালের সর্ববৃহৎ ও অবিচ্ছিন্ন সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা। ১২২৭ সালে তার মৃত্যুর সময় পীত সাগর থেকে শুরু করে ইরান, ইরাক, এবং দক্ষিণ রাশিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল তার সাম্রাজ্য। সাম্রাজ্যের বিস্তৃতি ছিল এক কোটি তিরানব্বই লক্ষ বর্গকিলোমিটার। এই সাম্রাজ্য তিনি তৈরি করেছিলেন মাত্র ২১ বছরে (১২০৬-১২২৭)।
চেঙ্গিস খানে বিশ্বের প্রথম আন্তর্জাতিক ডাকবিভাগ চালু করেন।
চেঙ্গিস খান সাফল্যের সাথে ধর্ম নিরপেক্ষ ও প্রগতিশীল সমাজ গড়ে তুলেছিলেন। তবে যুদ্ধ ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন নির্মম ও রক্তপিপাসু।
১২০১ সালে তাইজুত গোত্রের সাথে এক যুদ্ধে চেঙ্গিস খান তীরবিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছিলেন। যুদ্ধের পর ঝিবি নামে এক যোদ্ধা তার কাছে এসে বলে ”গতকাল আমার তীরেই আপনি আহত হয়েছিলেন। আপনি যদি আমাকে বাচিয়ে রাখেন তবে আমি আপনার সৈন্যবাহিনীতে যোগ দিতে চাই।” চেঙ্গিস ঝিবির সততায় মুগ্ধ হয়ে তার ইচ্ছা পূরণ করেন এবং নাম দেন ‘জেবে’ বা ‘তীর’। এই জেবে পরে মঙ্গোল সেনাবাহিনীর অন্যতম প্রধান সেনাপতির মর্যাদা লাভ করে এবং ইউরোপ আক্রমণ করে।
ধর্মান্ধতা মধ্যযুগের প্রচলিত প্রথা ছিল। কিন্তু চেঙ্গিস খানের শাসনাধীন এলাকা সম্পূর্ণ ধর্মনিরপেক্ষ ছিল। সবাই যেন স্বাধীনভাবে যার যার ধর্ম পালন করতে পারে সেজন্য চেঙ্গিস খান আনুষ্ঠানিক ফরমান জারি করেছিলেন।
একবার চেঙ্গিস খানের শাসনের আওতায় যেসব জনপদ এসেছে তারা অন্য যে কোন স্থানের তুলনায় অনেক বেশী নিরাপদ ও এবং স্বাধীন ছিলো। সেই মধ্যযুগে তার সাম্রাজ্যে নারী-স্বাধীনতা ছিল।
Comments