রোহিঙ্গারা রাষ্ট্রহীন মানুষ। মায়ানমারের রাখাইন রাজ্যে তাদের বসবাস। রাখাইন রাজ্যের আদি নাম আরাকান। যদিও রোহিঙ্গাদের পূর্বপুরুষরা শত শত বছর ধরে সেখানে আছে কিন্তু মায়ানমার / বার্মা সরকার রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠিকে কখনো নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি দেয়নি; অদূর ভবিষ্যতে দেবেও না।রাষ্ট্রহীন মানুষ হিসেবে রোহিঙ্গারা রাখাইন রাজ্য সহ প্রতিবেশী বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ডের বিভিন্ন শরণার্থীশিবিরে বাস করে।
খ্রিস্টীয় অষ্টম শতাব্দীতে আরাকান অঞ্চল শাসন করতো চন্দ্র বংশ। আরব বণিকদের একটা জাহাজ রামব্রী দ্বীপের তীরে ভেঙে পড়ে। কিছু আরব তীরে এসে স্থানীয়দের কাছে সাহায্য চায়। রাজা মহত ইং চন্দ্র তাদের সাহায্য করেন। কিছু আরব স্থানীয় রমণীদের বিয়ে করে। এসব আরব বণিক বসতি স্থাপনের আর্জি করলে মহত ইং চন্দ্র তা মঞ্জুর করেন।
চতুর্দশ শতকে আরাকানে মুসলিমরা স্থিতু গাড়ে। ততকালীন বৌদ্ধ রাজা Narameikhla ( যিনি তার রাজ্য পুনউদ্ধার করেছিলেন গৌড়ের সুলতান জালালুদ্দিন শাহের সহযোগিতায় ) তার রাজ দরবারে মুসলিম উপদেষ্টা এবং সভাসদদের স্বাদরে গ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু পরে দক্ষিণের বৌদ্ধ বর্মীরা আরাকান দখল করে নেয়, Narameikhla পরাজিত হন। আরাকান দখলের পর বৌদ্ধ বর্মীরা সব রোহিঙ্গা মুসলিমদের তাড়িয়ে দিয়েছিল। তখন প্রায় ৩৫ হাজার রোহিঙ্গা ততকালীন ব্রিটিশ-ভারতের অন্তর্গত বাংলায় ( বর্তমান চট্রগ্রাম এলাকায় ) পালিয়ে গিয়েছিল।
১৫৩০ খ্রিস্টাব্দে বঙ্গোপসাগরে পর্তুগিজ জলদস্যুদের আবির্ভাব শুরু হয়। রোসাঙ্গ রাজা জেবুকশাহ মুগলদের প্রতিরোধ করার জন্য পর্তুগিজদের প্রশিক্ষক হিসেবে নিয়োগ করেন। ধীরে ধীরে তিনি আরাকান মগদের দিয়ে একটি শক্তিশালী নৌবহর গড়ে তোলেন। মগদস্যুরা মেঘনা নদীর মোহনা দিয়ে বাংলায় প্রবেশ করে প্রচুর মানুষদের অপহরণ করে দাস হিসেবে আরাকানে নিয়ে যেত। এদের নিয়ে আরাকানের দুর্গম বনভূমি পরিস্কার করানো হতো। তখন থেকে বাঙালদের বংশ আরাকান এলাকায় বৃদ্ধি হতে লাগে।
১৮২৪ সালে ব্রিটিশ বাহিনী বার্মার সাথে যুদ্ধ শুরু করে। এটা প্রথম এ্যংলো-বার্মা যুদ্ধ নামে পরিচিত। ব্রিটিশ বাহিনী ১৮২৬ সালে আরাকানের নিয়ন্ত্রন নেয়। শাসন-প্রণালীর অংশ হিসাবে ব্রিটিশ কর্মকর্তারা চট্রগ্রাম এলাকায় অবস্থিত রোহিঙ্গা ও স্থানীয় বাঙ্গালী কৃষকদের আরাকানের জনমানবশূন্য এলাকাতে যেতে উৎসাহিত করে। বিট্রিশ-ভারত থেকে রোহিঙ্গা ও স্থানীয় বাঙ্গালী কৃষকদের ক্রমাগত আগমন আরাকানে বসবাসরত স্থানীয় রাখাইন বৌদ্ধদের মধ্যে তিব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। তারা এর বিরোধিতা করে। সেই থেকেই জাতিগত উত্তেজনার শুরু যা আজও বর্তমান।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় (১৯৩৯-১৯৪৫) পট পরিবর্তন হয়। দক্ষিণ এশিয়ায় জাপানী আগ্রাসনের মুখে ব্রিটিশ বাহিনী আরাকান ছেড়ে যায়। ব্রিটিশ সৈন্য প্রত্যাহারের পর বৌদ্ধরা মুসলিমদের আক্রমন শুরু করে। ধীরে ধীরে মুসলিম ও বৌদ্ধরা একে অপরের বিরুদ্ধে সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে। কিছু মুসলিম মিত্রশক্তির পক্ষে জাপানের বিরুদ্ধে গুপ্তচরবৃত্তি করতে শুরু করে। যখন জাপান এটা জানতে পারে তারা সকল মুসলিমদের উপর হত্যা, ধর্ষণসহ নিষ্ঠুর নির্যাতন চালাতে লাগে। প্রায় ৪০,০০০ রোহিঙ্গা তখন চট্টগ্রামে পালিয়ে গিয়েছিল।
১৯৪৮ সালে বার্মা স্বাধীন হলে সেসময়ের সরকার ঘোষণা করে যে রোহিঙ্গারা হচ্ছে ভারতীয় উপমহাদেশ থেকে ‘সম্প্রতি’ আসা একটি উপজাতি এবং এদের স্থানীয় আদিবাসী গণ্য করা বা বার্মার নাগরিকত্ব দেওয়া হবে না। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে ১৯৬২ সাল পর্যন্ত মুসলিমরা আরাকানে একটি আলাদা রোহিঙ্গা রাষ্ট্রের দাবি জানিয়ে আসছিল।১৯৬২ সালে সামরিক জান্তা Ne Win ক্ষমতা দখল করে সেই দাবী পুরোপুরি প্রত্যাখ্যান করেন এবং তার সৈন্যদের নির্দেশ দেন মুসলিমদের কঠোর ভাবে দমন করতে। রোহিঙ্গাদের সম্পত্তি জোর করে কেড়ে নেওয়া হতে থাকে। তাদের নিজ ভুমি থেকে উৎখাত করে শরণার্থীশিবিরে রাখা হয় এবং বাধ্যতামূলক শ্রমে নিয়োজিত করা হয়। রোহিঙ্গারা তখন থেকেই এদিকে সেদিকে পালিয়ে যেতে থাকে।থাইল্যান্ড ও মালয়শিয়াতেই বেশী গেছে।
সাম্প্রতিক সমস্যা ২০১২ তে শুরু। জাতিগত দাঙ্গা লাগে বৌদ্ধ ও মুসলিমদের মাঝে। মুসলিমরা প্রান হারায় হাজারে হাজারে। পালিয়ে যেতে চায় বাংলাদেশে। বাংলাদেশ তাদের ফিরিয়ে দেয়। তারা পাড়ি দেয় থাইল্যান্ডের দিকে।বেশীর ভাগ রোহিঙ্গাই থাই মাফিয়াদের হাতে পরে। নির্যাতিত হতে থাকে আরও বেশী।
খ্রিস্টীয় অষ্টম শতাব্দীতে আরাকান অঞ্চল শাসন করতো চন্দ্র বংশ। আরব বণিকদের একটা জাহাজ রামব্রী দ্বীপের তীরে ভেঙে পড়ে। কিছু আরব তীরে এসে স্থানীয়দের কাছে সাহায্য চায়। রাজা মহত ইং চন্দ্র তাদের সাহায্য করেন। কিছু আরব স্থানীয় রমণীদের বিয়ে করে। এসব আরব বণিক বসতি স্থাপনের আর্জি করলে মহত ইং চন্দ্র তা মঞ্জুর করেন।
চতুর্দশ শতকে আরাকানে মুসলিমরা স্থিতু গাড়ে। ততকালীন বৌদ্ধ রাজা Narameikhla ( যিনি তার রাজ্য পুনউদ্ধার করেছিলেন গৌড়ের সুলতান জালালুদ্দিন শাহের সহযোগিতায় ) তার রাজ দরবারে মুসলিম উপদেষ্টা এবং সভাসদদের স্বাদরে গ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু পরে দক্ষিণের বৌদ্ধ বর্মীরা আরাকান দখল করে নেয়, Narameikhla পরাজিত হন। আরাকান দখলের পর বৌদ্ধ বর্মীরা সব রোহিঙ্গা মুসলিমদের তাড়িয়ে দিয়েছিল। তখন প্রায় ৩৫ হাজার রোহিঙ্গা ততকালীন ব্রিটিশ-ভারতের অন্তর্গত বাংলায় ( বর্তমান চট্রগ্রাম এলাকায় ) পালিয়ে গিয়েছিল।
১৫৩০ খ্রিস্টাব্দে বঙ্গোপসাগরে পর্তুগিজ জলদস্যুদের আবির্ভাব শুরু হয়। রোসাঙ্গ রাজা জেবুকশাহ মুগলদের প্রতিরোধ করার জন্য পর্তুগিজদের প্রশিক্ষক হিসেবে নিয়োগ করেন। ধীরে ধীরে তিনি আরাকান মগদের দিয়ে একটি শক্তিশালী নৌবহর গড়ে তোলেন। মগদস্যুরা মেঘনা নদীর মোহনা দিয়ে বাংলায় প্রবেশ করে প্রচুর মানুষদের অপহরণ করে দাস হিসেবে আরাকানে নিয়ে যেত। এদের নিয়ে আরাকানের দুর্গম বনভূমি পরিস্কার করানো হতো। তখন থেকে বাঙালদের বংশ আরাকান এলাকায় বৃদ্ধি হতে লাগে।
১৮২৪ সালে ব্রিটিশ বাহিনী বার্মার সাথে যুদ্ধ শুরু করে। এটা প্রথম এ্যংলো-বার্মা যুদ্ধ নামে পরিচিত। ব্রিটিশ বাহিনী ১৮২৬ সালে আরাকানের নিয়ন্ত্রন নেয়। শাসন-প্রণালীর অংশ হিসাবে ব্রিটিশ কর্মকর্তারা চট্রগ্রাম এলাকায় অবস্থিত রোহিঙ্গা ও স্থানীয় বাঙ্গালী কৃষকদের আরাকানের জনমানবশূন্য এলাকাতে যেতে উৎসাহিত করে। বিট্রিশ-ভারত থেকে রোহিঙ্গা ও স্থানীয় বাঙ্গালী কৃষকদের ক্রমাগত আগমন আরাকানে বসবাসরত স্থানীয় রাখাইন বৌদ্ধদের মধ্যে তিব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। তারা এর বিরোধিতা করে। সেই থেকেই জাতিগত উত্তেজনার শুরু যা আজও বর্তমান।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় (১৯৩৯-১৯৪৫) পট পরিবর্তন হয়। দক্ষিণ এশিয়ায় জাপানী আগ্রাসনের মুখে ব্রিটিশ বাহিনী আরাকান ছেড়ে যায়। ব্রিটিশ সৈন্য প্রত্যাহারের পর বৌদ্ধরা মুসলিমদের আক্রমন শুরু করে। ধীরে ধীরে মুসলিম ও বৌদ্ধরা একে অপরের বিরুদ্ধে সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে। কিছু মুসলিম মিত্রশক্তির পক্ষে জাপানের বিরুদ্ধে গুপ্তচরবৃত্তি করতে শুরু করে। যখন জাপান এটা জানতে পারে তারা সকল মুসলিমদের উপর হত্যা, ধর্ষণসহ নিষ্ঠুর নির্যাতন চালাতে লাগে। প্রায় ৪০,০০০ রোহিঙ্গা তখন চট্টগ্রামে পালিয়ে গিয়েছিল।
১৯৪৮ সালে বার্মা স্বাধীন হলে সেসময়ের সরকার ঘোষণা করে যে রোহিঙ্গারা হচ্ছে ভারতীয় উপমহাদেশ থেকে ‘সম্প্রতি’ আসা একটি উপজাতি এবং এদের স্থানীয় আদিবাসী গণ্য করা বা বার্মার নাগরিকত্ব দেওয়া হবে না। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে ১৯৬২ সাল পর্যন্ত মুসলিমরা আরাকানে একটি আলাদা রোহিঙ্গা রাষ্ট্রের দাবি জানিয়ে আসছিল।১৯৬২ সালে সামরিক জান্তা Ne Win ক্ষমতা দখল করে সেই দাবী পুরোপুরি প্রত্যাখ্যান করেন এবং তার সৈন্যদের নির্দেশ দেন মুসলিমদের কঠোর ভাবে দমন করতে। রোহিঙ্গাদের সম্পত্তি জোর করে কেড়ে নেওয়া হতে থাকে। তাদের নিজ ভুমি থেকে উৎখাত করে শরণার্থীশিবিরে রাখা হয় এবং বাধ্যতামূলক শ্রমে নিয়োজিত করা হয়। রোহিঙ্গারা তখন থেকেই এদিকে সেদিকে পালিয়ে যেতে থাকে।থাইল্যান্ড ও মালয়শিয়াতেই বেশী গেছে।
সাম্প্রতিক সমস্যা ২০১২ তে শুরু। জাতিগত দাঙ্গা লাগে বৌদ্ধ ও মুসলিমদের মাঝে। মুসলিমরা প্রান হারায় হাজারে হাজারে। পালিয়ে যেতে চায় বাংলাদেশে। বাংলাদেশ তাদের ফিরিয়ে দেয়। তারা পাড়ি দেয় থাইল্যান্ডের দিকে।বেশীর ভাগ রোহিঙ্গাই থাই মাফিয়াদের হাতে পরে। নির্যাতিত হতে থাকে আরও বেশী।
Comments