১৯৭৭ সালের কথা। আব্দুর
রহমান
নামে এক প্রবীন রাজনৈতিক নেতা টাংগাইল শহরে বাস করতেন।নিরহংকারী, সুভাষী ও সাদাসিধে ও নিপাট ভদ্রলোক হিসেবে তিনি এলাকায় পরিচিত
ছিলেন। রাজনৈতিক ভাবে আব্দুর রহমান ন্যাপের সাথে জড়িত ছিলেন। মাওলানা ভাষানী বেঁচে থাকতে মোটামুটি তাঁর ছায়াসঙ্গী ছিলেন। মাওলানা ভাষানী মারা যাবার পর রাজনীতি থেকে দূরে সরে গিয়ে তিনি টাংগাইল নিউমার্কেটে পূর্ব-দক্ষিন কোনে ছোট একটা দোকান চালাতেন। টাংগাইলের ডি সি সাহেবও তাকে চিনতেন। একটা তদবির করার জন্য তিনি এক
বিকালে ডি সি সাহেবের বাসায় যান। ডি সি সব শুনে অপারগতা পোষণ করেন। কাকুতি মিনতি করেও লাভ হয়নি। আব্দুর রহমান একপর্যায় মন খারাপ করে চলে
আসেন। পরে কি মনে করে রাতে আবার যান। গেটের কাছে এসে দারওয়ানকে বলেন ডি সি সাহেবকে ডেকে
দিতে। ডিসি দোতলা থেকে রহমান সাহেবকে বললেন “আপনি অযথাই আবার এসেছেন।আমি আপনার জন্য এখন কিছুই করতে
পারবো না।"
আব্দুর রহমান মনবেদনা নিয়ে
তার আদালত পাড়ার বাসায় ফিরে আসেন।
এর আধা ঘণ্টা পড়ে ঘটে এক কান্ড। ঢাকা থেকে ফোন যায় ডি সি র কাছে। বলা হয়
আব্দুর রহমান সাহেবকে পরদিন সকালে বঙ্গভবনে আনতে হবে। ডি সি প্রশ্ন করেন ‘কেন’? তাকে বলা হয়
প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান সিধান্ত নিয়েছেন আব্দুর রহমান সাহেবকে মন্ত্রী সভায় অন্তর্ভুক্ত করবেন।
রাত দশটার সময় ডি সি কড়া নাড়েন আব্দুর
রহমান
সাহেবের বাসায়। এত রাতে ডি সি কে নিজের দরজায় দাড়িয়ে থাকতে দেখে ভূত দেখার মতো ভড়কে গিয়ে
বলেন-স্যার, স্যার, এত রাতে আপনি কষ্ট করে এসেছেন? আমাকে ডাকলেই
তো পারতেন।
ডি সি উত্তরে বললেন “আব্দুর রহমান সাহেব, এখন থেকে আমি আর স্যার না, এখন আপনিই স্যার”। হতভম্ব আব্দুর রহমান কে ডি সি আরও জানালেন “প্রেসিডেন্ট সাহেব আপনাকে ডেকে পাঠিয়েছেন স্যার। মন্ত্রী বানাবেন। শপথ নিতে কাল সকালে আপনাকে ঢাকা যেতে হবে স্যার।
দৃশ্যপট পরিবর্তন হলো, সম্বোধন
পরিবর্তন হলো। টাংগাইল শহরের সাদাসিধে প্রবীন রাজনীতিবিদ আব্দুর
রহমান
হয়ে উঠলেন মন্ত্রী। মন্ত্রী হওয়ার আগে তিনি জিয়াউর রহমানকে সামনা সামনি একদিনও দেখেননি। কথাও হয়নি। প্রেসিডেন্ট জিয়াউর
রহমানের প্রয়োজন ছিল একজন সৎ নিষ্ঠাবান রাজনীতিবিদের। আব্দুর রহমান সেই স্থান পূরণ করলেন।
Comments