নিউ পিপলস আর্মির দশজন গেরিলা ২০০৮ সালের ২৭ অক্টোবর সন্ধ্যা ৬টা ১৫ মিনিটের দিকে ফিলিপাইনের কুইজন প্রাদেশিক কারাগারে প্রবেশ করে। তারা ফিলিপাইন ড্রাগ এনফোর্সমেন্ট এজেন্সির পোশাক পরা ছিল। কুইজন কারাগারের কর্মকর্তারা গেরিলাদের ছদ্মবেশি ফাঁদে পা দেয়। গেরিলারা ভেতরে ঢুকেই কারারক্ষীদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ফেলে। ঘটনার আকস্মিকতায় বোকা বনে যাওয়া ২৪জন কারারক্ষী ও প্রহরীরা কোনো প্রকার বাঁধা না দিয়েই আত্মসমর্পন করে। বাকি ২৬জন কারারক্ষী ও ডেপুটি প্রহরী তখন ম্যানিলায় একটি সেমিনারে অংশগ্রহণ করছিল। স্বশস্ত্র নিউ পিউপলস আর্মি গেলিরারা কারারক্ষী ও প্রহরীদের একটি সেলে বন্ধী করে রাখে। এরপর তারা কারাগারের বিভিন্ন অংশ থেকে তাদের ৭জন নেতাকে খুঁজে বের করে যারা এই কারাগারে বিভিন্ন মেয়াদের সাজা ভোগ করছিল। এরপর আগে থেকেই প্রস্তুত চারটি ভ্যানে গেলিরারা তাদের নেতাদের নিয়ে পালিয়ে যায়।
নিউ পিপলস আর্মির এই অপারেশনটি মাত্র ১৫মিনিট স্থায়ী হয়েছিল। এই অপারেশনে কোনো গুলিবর্ষন ও রক্তপাত হয়নি। কারাগার থেকে বন্দী উদ্ধার করা অপারেশন এর থেকে দ্রুত গতিতে ও সার্থক ভাবে বিশ্বের কোন গেরিলা দল আগে করতে পারেনি।
তবে নিউ পিপলস আর্মিদের খুব কম আক্রমণই এমন নির্ভেজাল ও রক্তপাতমুক্ত হয়েছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নিউ পিপলস আর্মি তাদের নিষ্ঠুরতা ও নির্মমতা প্রকাশ করে। কম্যুনিস্ট মানসিকতায় গড়া এই দলের দক্ষ ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত গেরিলারা সরকারি কর্মকর্তা কিংবা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার লোকজনকে হত্যা করতে বিন্দুমাত্র দ্বিধাবোধ করে না। শুধু ২০১২ সালেই নিউ পিপলস আর্মির গেরিলারা ২৫জন সরকারি বাহিনীর সৈন্যকে গুলি করে হত্যা করে। পাশাপাশি দুজন মেয়রকেও তারা হত্যা করে প্রকাশ্য দিবালোকে। ২০১৩ সালের মে মাসে তারা একটি পুলিশ ট্রাকের উপর আতর্কিত হামলা করে। ওই ট্রাকে করে পুলিশের একটি কামান্ডো ইউনিট যাচ্ছিল। গেরিলারা প্রথমে রাস্তার পাশে বোমা বিস্ফোরণ ঘটায় এবং পরে ট্রাকে গুলি বর্ষন করে। এই আক্রমণে কামান্ডো ইউনিটের সাতজন নিহত হয় এবং আটজন আহত হয়।
১৯৬০ দশকে ফিলিপাইনসহ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের তরুণ ও ছাত্রদের মধ্যে জাতীয়তাবাদ ও দেশপ্রেমের একটি জোয়ার দেখা যায়। ওই রেঁনেসা বা জোয়ারের অংশ হিসেবে নিউ পিপলস আর্মি ১৯৬৯ সালের মার্চ মাসে গঠিত হয় যাদের উদ্দেশ্য ছিল গেরিলা যুদ্ধের মাধ্যমে সেই সময়ের প্রেসিডেন্ট ফার্দিনান্দ মার্কোস শাসিত সরকারের পতন ঘটানো ও দেশে কমিউনিজম প্রতিষ্ঠা করা। মার্কসবাদী আদর্শ নিয়ে এই গ্রুপটি গঠন করা হয়। ১৯৬৯ থেকে ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত চীনের সরকার নিউ পিপলস আর্মিদের বিভিন্ন ধরণের সহযোগিতা দিয়েছিল। এই সময়ে দলটি প্রচুর গেরিলা নিবন্ধন করে এবং বেশ কিছু বড় অপারেশন পরিচালনা করে। কিন্তু ১৯৭৬ সালে চীন সরকার তাদের সব ধরণের সাহায্য-সহযোগিতা তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। চীনের সমর্থন হারানোর পর নিউ পিপলস আর্মি বেশ খারাপ কয়েকটি বছর অতিক্রম করে। সুনির্দিষ্ট গাইডলাইনের অভাবে অধিকাংশ গেরিলা পিছু হটতে থাকে। দলের সংখ্যা ও কার্যক্রম আস্তে আস্তে কমতে থাকে। ১৯৮০ সালের মাঝামাঝিতে নিউ পিপলস আর্মির নেতারা পশ্চিমা কমিউনিস্ট পার্টি বিশেষ করে কানাডা, নরওয়ে ও সুইজারল্যান্ডের কাছ থেকে সাহায্য-সহযোগিতা পাওয়ার নতুন উৎস তৈরি করে। একই সময়ে তারা ফিলিপাইনের ধনীব্যক্তি ও বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ‘বিপ্লবী কর’ হিসেবে টাকা-পয়সা সংগ্রহ করতে শুরু করে।
নিউ পিপলস আর্মি তাদের অপারেশনে এম-১৬, এম-১৪, এম১ গারান্ডস, কার্বিনেস ও স্প্রিংফিল্ড রাইফেল, সি৪ এক্সপ্লোসিভ, বি৪০ এন্টি ট্যাংক রকেট এবং হাতে তৈরি গ্রেনেড ব্যবহার করে।
যদিও নিউ পিপলস আর্মিরা প্রাথমিকভাবে একটি গ্রাম্যভিত্তিক গেরিলা দল, কিন্তু তারা শহুরে অবকাঠামোর মধ্যেও কার্যক্রম চালিয়ে যেতে থাকে। ১৯৮৫ সালে তারা শহর ভিত্তিক কিলার স্কোয়াড তৈরি করে। নিরাপত্তা বাহিনী, রাজনীতিবিদ, বিচারক, সরকারি কর্মকর্তা ও অভিযুক্ত অপরাধীদের টার্গেট করা হয়। নিউ পিপলস আর্মি মার্কসবাদী আদর্শের অনুসারী হওয়ায় শুরুথেকেই যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে ছিল তাদের অবস্থান। তাই ফিলিপাইনে যুক্তরাষ্ট্রের খবরদারির বিরুদ্ধে তারা অবস্থান নেয় এবং আমেরিকার সামরিক ব্যক্তিদের তাদের প্রধান টার্গেট হিসেবে নেয়। এক সময় তারা যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহীনির মেজর জেমস রোকে গুলি করে হত্যা করে যিনি ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর ‘সার্ভাইভাল, এভাসন, রেসিস্ট্যান্ট ও এস্কেপ স্কোয়াড প্রতিষ্ঠাতা। ২০০২ সালের আগস্টে যুক্তরাষ্ট্র ও ২০০৫ সালের নভেম্বরে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন বৈদেশিক সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করে।
বর্তমানে নিউ পিপলস আর্মির প্রতিষ্ঠাতা হোসে মারিয়া সিসন সহ জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তরা আত্মগোপনে থেকে কার্যক্রম পরিচালনা করেন। তাই দলের ক্ষমতা, নিয়ন্ত্রণ, কর্তৃত্ব সবই বেশ কমে গেছে। এখন মাত্র ৭ হাজার ২০০ গেরিলা রয়েছে তাদের দলে ১৯৮০ সালে যা ছিল ২৬ হাজার। এখন তাদের কার্যক্রম ফিলিপাইনের দশটি প্রদেশে আছে যা ১৯৮৬ সালের দিকে ৬৭টি প্রদেশে ছিল।
আগামী দশ বছরে নিউ পিপলস আর্মি বিলুপ্ত হয়তো হবে না তবে তাদের কর্তৃত্ব ও ক্ষমতা আরও কমে যাবে কারণ দলের কোন স্থির কোন লক্ষ্য নেই, কম্যুনিজমের জোয়ার নেই, নেতারা দেশের বাইরে থাকেন এবং অর্থের জোগান ক্রমেই কমছে। দলটি বাস্তবিকই হয়ে যাবে ওল্ডস পিপলস আর্মি।
নিউ পিপলস আর্মির এই অপারেশনটি মাত্র ১৫মিনিট স্থায়ী হয়েছিল। এই অপারেশনে কোনো গুলিবর্ষন ও রক্তপাত হয়নি। কারাগার থেকে বন্দী উদ্ধার করা অপারেশন এর থেকে দ্রুত গতিতে ও সার্থক ভাবে বিশ্বের কোন গেরিলা দল আগে করতে পারেনি।
তবে নিউ পিপলস আর্মিদের খুব কম আক্রমণই এমন নির্ভেজাল ও রক্তপাতমুক্ত হয়েছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নিউ পিপলস আর্মি তাদের নিষ্ঠুরতা ও নির্মমতা প্রকাশ করে। কম্যুনিস্ট মানসিকতায় গড়া এই দলের দক্ষ ও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত গেরিলারা সরকারি কর্মকর্তা কিংবা আইন প্রয়োগকারী সংস্থার লোকজনকে হত্যা করতে বিন্দুমাত্র দ্বিধাবোধ করে না। শুধু ২০১২ সালেই নিউ পিপলস আর্মির গেরিলারা ২৫জন সরকারি বাহিনীর সৈন্যকে গুলি করে হত্যা করে। পাশাপাশি দুজন মেয়রকেও তারা হত্যা করে প্রকাশ্য দিবালোকে। ২০১৩ সালের মে মাসে তারা একটি পুলিশ ট্রাকের উপর আতর্কিত হামলা করে। ওই ট্রাকে করে পুলিশের একটি কামান্ডো ইউনিট যাচ্ছিল। গেরিলারা প্রথমে রাস্তার পাশে বোমা বিস্ফোরণ ঘটায় এবং পরে ট্রাকে গুলি বর্ষন করে। এই আক্রমণে কামান্ডো ইউনিটের সাতজন নিহত হয় এবং আটজন আহত হয়।
১৯৬০ দশকে ফিলিপাইনসহ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের তরুণ ও ছাত্রদের মধ্যে জাতীয়তাবাদ ও দেশপ্রেমের একটি জোয়ার দেখা যায়। ওই রেঁনেসা বা জোয়ারের অংশ হিসেবে নিউ পিপলস আর্মি ১৯৬৯ সালের মার্চ মাসে গঠিত হয় যাদের উদ্দেশ্য ছিল গেরিলা যুদ্ধের মাধ্যমে সেই সময়ের প্রেসিডেন্ট ফার্দিনান্দ মার্কোস শাসিত সরকারের পতন ঘটানো ও দেশে কমিউনিজম প্রতিষ্ঠা করা। মার্কসবাদী আদর্শ নিয়ে এই গ্রুপটি গঠন করা হয়। ১৯৬৯ থেকে ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত চীনের সরকার নিউ পিপলস আর্মিদের বিভিন্ন ধরণের সহযোগিতা দিয়েছিল। এই সময়ে দলটি প্রচুর গেরিলা নিবন্ধন করে এবং বেশ কিছু বড় অপারেশন পরিচালনা করে। কিন্তু ১৯৭৬ সালে চীন সরকার তাদের সব ধরণের সাহায্য-সহযোগিতা তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। চীনের সমর্থন হারানোর পর নিউ পিপলস আর্মি বেশ খারাপ কয়েকটি বছর অতিক্রম করে। সুনির্দিষ্ট গাইডলাইনের অভাবে অধিকাংশ গেরিলা পিছু হটতে থাকে। দলের সংখ্যা ও কার্যক্রম আস্তে আস্তে কমতে থাকে। ১৯৮০ সালের মাঝামাঝিতে নিউ পিপলস আর্মির নেতারা পশ্চিমা কমিউনিস্ট পার্টি বিশেষ করে কানাডা, নরওয়ে ও সুইজারল্যান্ডের কাছ থেকে সাহায্য-সহযোগিতা পাওয়ার নতুন উৎস তৈরি করে। একই সময়ে তারা ফিলিপাইনের ধনীব্যক্তি ও বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে ‘বিপ্লবী কর’ হিসেবে টাকা-পয়সা সংগ্রহ করতে শুরু করে।
নিউ পিপলস আর্মি তাদের অপারেশনে এম-১৬, এম-১৪, এম১ গারান্ডস, কার্বিনেস ও স্প্রিংফিল্ড রাইফেল, সি৪ এক্সপ্লোসিভ, বি৪০ এন্টি ট্যাংক রকেট এবং হাতে তৈরি গ্রেনেড ব্যবহার করে।
যদিও নিউ পিপলস আর্মিরা প্রাথমিকভাবে একটি গ্রাম্যভিত্তিক গেরিলা দল, কিন্তু তারা শহুরে অবকাঠামোর মধ্যেও কার্যক্রম চালিয়ে যেতে থাকে। ১৯৮৫ সালে তারা শহর ভিত্তিক কিলার স্কোয়াড তৈরি করে। নিরাপত্তা বাহিনী, রাজনীতিবিদ, বিচারক, সরকারি কর্মকর্তা ও অভিযুক্ত অপরাধীদের টার্গেট করা হয়। নিউ পিপলস আর্মি মার্কসবাদী আদর্শের অনুসারী হওয়ায় শুরুথেকেই যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষে ছিল তাদের অবস্থান। তাই ফিলিপাইনে যুক্তরাষ্ট্রের খবরদারির বিরুদ্ধে তারা অবস্থান নেয় এবং আমেরিকার সামরিক ব্যক্তিদের তাদের প্রধান টার্গেট হিসেবে নেয়। এক সময় তারা যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহীনির মেজর জেমস রোকে গুলি করে হত্যা করে যিনি ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর ‘সার্ভাইভাল, এভাসন, রেসিস্ট্যান্ট ও এস্কেপ স্কোয়াড প্রতিষ্ঠাতা। ২০০২ সালের আগস্টে যুক্তরাষ্ট্র ও ২০০৫ সালের নভেম্বরে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন বৈদেশিক সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করে।
বর্তমানে নিউ পিপলস আর্মির প্রতিষ্ঠাতা হোসে মারিয়া সিসন সহ জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তরা আত্মগোপনে থেকে কার্যক্রম পরিচালনা করেন। তাই দলের ক্ষমতা, নিয়ন্ত্রণ, কর্তৃত্ব সবই বেশ কমে গেছে। এখন মাত্র ৭ হাজার ২০০ গেরিলা রয়েছে তাদের দলে ১৯৮০ সালে যা ছিল ২৬ হাজার। এখন তাদের কার্যক্রম ফিলিপাইনের দশটি প্রদেশে আছে যা ১৯৮৬ সালের দিকে ৬৭টি প্রদেশে ছিল।
আগামী দশ বছরে নিউ পিপলস আর্মি বিলুপ্ত হয়তো হবে না তবে তাদের কর্তৃত্ব ও ক্ষমতা আরও কমে যাবে কারণ দলের কোন স্থির কোন লক্ষ্য নেই, কম্যুনিজমের জোয়ার নেই, নেতারা দেশের বাইরে থাকেন এবং অর্থের জোগান ক্রমেই কমছে। দলটি বাস্তবিকই হয়ে যাবে ওল্ডস পিপলস আর্মি।
Comments