অন্যান্য অনেক জমিদারদের মতন বালিয়াটি জমিদারেরাও লবণ ব্যবসা করে টাকা বানিয়েছিল এবং ব্রিটিশদের কাছ থেকে ‘জমিদারি’ কিনেছিল। খাজনা আদায়ে তারা ছিল নির্মম যা প্রাথমিক ভাবে তাদের ধনদৌলত বাড়িয়ে দিয়েছিলো কয়েক গুন। পূর্ববঙ্গের প্রতাপশালী জমিদারদের মধ্যে বালিয়াটির রায় বাহাদুররা বিত্ত-প্রতিপত্তিতে প্রায় শীর্ষস্থানীয় ছিল। আবার অন্যান্য অনেক জমিদারদের মতনই বালিয়াটি জমিদারেরা মাত্র তিন পুরুষ এই প্রতিপত্তি ধরে রাখতে পেরেছিল।
বালিয়াটি জমিদার বাড়ীতে ৭টি
দক্ষিনমুখি দালান আছে। এটি মানিকগঞ্জ জেলার সাটুরিয়ায় ১৬,৫৫৪ বর্গমিটার এলাকা জুড়ে অবস্থিত।
প্রতিটি দালান করন্থিয়ান ডিজাইনের গোলাকার কলামে তৈরি করা যা লম্বায় প্রায় ৪০০
ফুট। লন্ডন ও কলকাতা থেকে আনা নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করে গড়ে তোলা হয় তিন
তলাবিশিষ্ট এই দালানগুলি। এখানে মোট ২০০টি কক্ষ আছে। একটি দালানের দ্বিতীয় তলায়
রয়েছে রংমহল। দালান গুলোতে আছে সিন্দুক, ছোট বড় আয়না, ঝাড়বাতি, লণ্ঠন, শ্বেত পাথরের ষাঁড়, শ্বেত পাথরের টেবিল, পালঙ্ক, আলনা, কাঠ এবং বেতের চেয়ার সহ আরও অনেক
নিদর্শন। মজলিস কক্ষে মূল্যবান ঝাড়বাতিও রয়েছে। মজলিস কক্ষটির দেয়ালে হাতে আঁকা
ছবি আছে। অন্দরমহলে ছিল অতিথিদের থাকার
জায়গা, রন্ধনশালা,
সহিস আর
পরিচারকদের থাকার ঘর।
বালিয়াটির জমিদারদের পূর্বপুরুষ
গোবিন্দ রায় সাহা লবন ব্যাবসা করে তার ভাগ্য পরিবর্তন করেছিলেন। তার ছেলেরা
পরবর্তীতে এই প্রাসাদ নির্মাণ করেন। সেই সময় এই বাড়ীতে চত্বরে বারুনির মেলা বসত
এবং এর পশ্চিম দিকে তাল পুকুরের ধারে অনুষ্ঠিত হতো রথ উৎসব। তিন পুরুষ ধরে
প্রবল দাপটের সঙ্গে জমিদারি চালানোর পর ভারত বিভাগের সময় বালিয়াটি জমিদারদের পতন
হয়।
পূর্ববঙ্গের প্রতাপশালী জমিদারদের
মধ্যে বালিয়াটির রায় বাহাদুররা বিত্ত-প্রতিপত্তিতে শীর্ষস্থানীয় ছিল। এই বাড়ির
সামনে দিয়ে কেউ জুতা পায়ে বা ছাতা মাথায় দিয়ে চলাচল করতে পারত না। জমিদারেরা খাজনা
আদায়ে ছিল নির্মম। ব্রিটিশরা খাজনা আদায়ে স্যাফল্লের জন্যে বালিয়াটি
জমিদারদের রায় বাহাদুর খেতাব দেয়।
১৯৪৭ সালে ভারত বিভাগের পর বালিয়াটির
জমিদারেরা গণরোষের শিকার হয়। জনতার আক্রোশে দালানগুলোতে চলে ভাংচুর ও লুটপাট।
গণরোষে ১৯৪৮ সালে বালিয়াটির জমিদাররা সপরিবারে পালিয়ে যায় ভারতে। পরিত্যক্ত সম্পত্তি হিসেবে সরকার পরে এই বাড়ী অধিগ্রহণ করে।
Comments