Skip to main content

ইতিহাসের প্রেক্ষাপটে ইসরাইল-ফিলিস্তিন সংঘাত

মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম দেশগুলোকে নিয়ন্ত্রণ এবং একটা বৃহৎ রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের জন্যই নব্য ইহুদিবাদের উৎপত্তি করা হয়েছিল এবং কৌশলে ইসরাইল রাষ্ট্রের উদ্ভব ঘটানো হয়েছিল । কৌশল পুরোমাত্রায় কাজে দিয়েছে। ইসলাম অধ্যুষিত এলাকার একেবারে কেন্দ্রে ইহুদিদের জন্য আলাদা রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পেছনে যে সুদূরপ্রসারী এক অশুভ লক্ষ্য কাজ করেছে, তা তো এখন স্পষ্ট। আরব মুসলমান নেতারা ইহুদিদের অশুভ লক্ষ্য ঠেকাতে তো পারেইনি, বরং সাহায্য করেছে পদে পদে।

তিন একেশ্বরবাদ্বী ধর্মের কেন্দ্রবিন্দু ফিলিস্তীন
তিনটি প্রধান একেশ্বরবাদ্বী ধর্মের কেন্দ্রবিন্দু হিসাবে পরিচিত ফিলিস্তীন (প্যালেষ্টাইন ) ভূখন্ড একটি প্রাচীন উপত্যকা। প্রাচীনকাল থেকেই এই এলাকা  বিভিন্ন জাতি ও শাসকের দৃষ্টি আকর্ষন করেছে। ফিলিস্তিন ভূখণ্ডে পর্যায়ক্রমে ইহুদী, খৃষ্টান ও মুসলমানরা জনবসতি গড়ে তোলে। প্রথমে ছিল ইহুদীদের জেরুজালেম ভিত্তক জুডাহ রাষ্ট্র যার রাজা ছিলেন ডেভিড (দাউদ নবী)। খৃস্টপূর্ব ৯৬২ অব্দে ডেভিডদের ছেলে সলোমন (সোলেমান নবী) প্রথম ইহুদী মন্দির নির্মান করেন জেরুজালেমে যা ব্যবলনীয় রাজা নেবুচাদনেজা ধ্বংস করে দেয়। পরে রোমানদের আক্রমনে ইহুদীরা জেরুজালেম থেকে বিতারিত হয়। রোমানদের আক্রমনে বিপর্যস্ত ইহুদীরা ইউরোপের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পরে এবং নির্বাসিত জীবন যাপন শুরু করে। পূর্ব ইউরোপের বিভিন্ন দেশে তারা বস্তিতে এবং শহরের উপকন্ঠে বাস করতো। সপ্তম শতাব্দীতে মুসলমানরা জেরুজালেম জয়ের পর থেকে অটোম্যান সাম্রাজ্যের শেষ পর্যন্ত এই  ভূখণ্ড মুসলমানদের অধীনে থাকে। এই সময়ে  ফিলিস্তীনে মুসলমান, খৃষ্টান, মেরুনাইট, দ্রুজ ও ইহুদীরা এক সঙ্গে বাস করত; সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা যে হতো না, তা নয়, তবে খুবই কম। 

প্রাচীন ফিলিস্তিন
ঊনবিংশ শতাব্দির দ্বিতীয়ার্ধে আধিপত্যের বলয় বাড়ানো নিয়ে ব্রিটেন, ফ্রান্স ও জার্মানি এই তিন দেশের মধ্যে প্রতিযোগিতা শুরু হয়। বিভিন্ন দেশ ও অঞ্চলকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে আনার জন্য তারা নানা কৌশল অবলম্বন করছিল। ফিলিস্তীন ভূখণ্ডের ওপরও তাদের  দৃষ্টি ছিল। নেপোলিয়ন বোনাপার্টের শাসনামলে ফিলিস্তীনকে নিজের উপনিবেশে পরিণত করার জন্য  চেষ্টা চালায় ফ্রান্স। ফ্রান্সের ব্যপারটা টের পেয়ে এক সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা হাতে নেয় ব্রিটেন। এ পরিকল্পনার আওতায় সাম্রাজ্যবাদ ও ইহুদিবাদের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা সৃষ্টি করে তারা। ওসমানীয় সাম্রাজ্য যখন আরব বিদ্রোহের কারনে পতনের মুখে, তখন পাশ্চাত্যে চলছিল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অগ্রগতি। এ সময় ব্রিটেন সুচারু ভাবে আধিপত্য প্রতিষ্ঠার সুযোগ করে নেয়। তাদের আধিপত্য বিস্তারের জন্য দুটি জিনিস প্রয়োজন ছিল; এক- মধ্যপ্রাচ্য, উত্তর আফ্রিকা ও ইউরোপের একাংশ নিয়ে গঠিত উসমানীয় সাম্রাজ্যকে ভেঙে ফেলা এবং দুই- পাশ্চাত্যের স্বার্থ সংরক্ষণকারী সরকার বসানো। ইসরাইল প্রতিষ্ঠা দ্বিতীয় প্রয়োজনের ফসল।

ততদিনে বিভিন্ন দেশের বস্তি এবং শহরের উপকন্ঠের নির্বাসিত জীবন থেকে মুক্তির জন্য ইহুদীরা ইহুদীবাদী আন্দোলন (Zionism) শুরু করে।  ঊনবিংশ শতাব্দীতে কিছু সংখ্যক ইহুদী ফিলিস্তিন ভূখন্ডে ফিরে এসে জেরুজালেম, সাফেদ এবং ত্রিবেরীতে বসবাস শুরু করে। এরা Halukah হিসাবে পরিচিত। প্রথমে আসে রাশিয়া থেকে এবং পরে আসে পূর্ব ইউরোপ থেকে। যারা আসে, তাদের সিংহভাগ ছিল সেদেশের সরকার কর্তৃক অত্যাচারিত। এই দলটি 'Lovers of Zionism' নামে এক  সংগঠন গড়ে তোলে। এই  সংগঠন ১৮৮২ সালে প্যালেষ্টাইনে একটা জায়ন কলোনী গড়ে তোলে। পশ্চিমা ধনী ইহুদীরা জায়ন কলোনীতে থাকা ইহুদীদের প্রয়োজনীয় উপকরণ ও মূলধন দিতে থাকে এবং অর্থ দিতে থাকে  আরবদের কাছ থেকে জমিজমা কেনার জন্য। এ দলটি ধীরে ধীরে সংগঠিত হয়ে রাজনৈতিক রুপ ধারনের পথে আগ্রসর হলো।
প্রাচীন ফিলিস্তিনি জনপদ

ইহুদীবাদ দর্শনের রাজনৈতিক রুপ
ইহুদীবাদী দর্শনকে রাজনৈতিক রুপ দিয়েছে বুদাপেস্টের একজন সাংবাদিক ডঃ থিওডোর হাজের্ল। ১৮৯৬ সালে হাজের্ল Judenstat নামে একটি বই লিখে যেটাতে ইহুদীবাদী দর্শনের রাজনৈতিক রূপরেখা ছিল । ১৮৯৭ সালে সুইজারল্যান্ডের বাসেল শহরে তারই প্রচেষ্টায় প্রথম জায়ানবাদী কংগ্রেস আহবান করা হয়। জায়নবাদ দাবি করে যে আল্লাহর সঙ্গে ইহুদিদের একটা চুক্তি হয়েছে, অতএব ফিলিস্তীনে তাদের দাবি অনুযায়ী একটি ইহুদি রাষ্ট্র কায়েম করতেই হবে, এর বিরুদ্ধে কোন ইহলৌকিক যুক্তি খাটবে না, অন্য কোন ধর্মের যুক্তিও খাটবে না। সম্মেলন সফল হয় এবং সিদ্বান্ত হয় যে ফিলিস্তীনে ইহুদীদের জন্য একটি আবাসভূমি প্রতিষ্ঠা করতে হবে, ইহুদীদের জাতীয় গৌরব ও আকাঙ্খাকে শক্তিশালী করতে হবে এবং ইহুদী কৃষিজীবি ও শ্রমিকদের সাহায্যে ফিলিস্তিনকে ইহুদী উপনিবেশ হিসেবে তৈরী করতে হবে। মূলত সেই সম্মেলনে নেয়া সিধান্ত গুলো এখনো ইহুদীদের / ইসরাইলের আগ্রাসনের চাবিকাঠি।

ফিলিস্তীনের ওপর ব্রিটেনের একক  আধিপত্য
আরব মুসলমানেরা পরিণতি না চিন্তা করেই প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় তুরস্কের উসমানি খেলাফতের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে। এর সাথে যোগ কিছু মুসলমান শাসকদের অদূরদর্শিতা এবং ব্রিটিশদের যথাযথপররাষ্ট্র কৌশল প্রয়োগ। ফলশ্রুতিতে ভেঙ্গে যায়  তুরস্কে মুসলিম খিলাফত, পতন হয় তুর্কি অটোমান সাম্রাজ্যের। ফিলিস্তিনসহ বেশ কিছু আরব এলাকা চলে যায় ইংল্যান্ড এবং ফ্রান্সের দখলে।  ব্রিটিশ সশস্ত্র বাহিনী ১৯১৭ সালে ফিলিস্তীন ও জেরুজালেম দখল করে নেয়। এর পরের বছর (১৯১৮) নবপ্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্রসংঘ ফিলিস্তীনের ওপর ব্রিটেনের একক আধিপত্যকে স্বীকৃতি দেয়।

ইহুদী জনপদ
ইহুদীদের থাকার কোন জায়গা তখন নেই, তারা ইউরোপের নানা দেশে ছড়িয়ে আছে। পৃথিবীর কোন দেশ তাদের ভূখণ্ডে ইহুদীদের বসবাস করতে দিতে রাজী হয়নি। ব্রিটিশ সরকার তখন এ অঞ্চলের অধিকর্তা। তারা চায়নি ইউরোপে ইহুদীদের জায়গা দিতে। কিছু বিশ্লেষণের পর এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে পরামর্শ করে ব্রিটিশরা ঠিক করলো মধ্যপ্রাচ্যেই দেয়া হবে ইহুদীদের থাকার জায়গা। ১৯১৭ সালের নভেম্বর মাসে তৎকালীন ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী, আর্থার জেমস বালফো্, ফিলিস্তীন এলাকায় ইহুদিদের জন্য আলাদা রাষ্ট্রে গঠনের ঘোষণা করেন। এ ঘোষণার পরপরই বিপুল সংখ্যক ইহুদি ইউরোপের বিভিন্ন এলাকা থেকে এসে ফিলিস্তীনে বসতি স্থাপন করতে শুরু করে। মধ্যপ্রাচ্যের মুসলমান রাষ্ট্রগুলো তখন নিজেদের মধ্যে কলহে ব্যস্ত ছিল। উপরিপুরি তাদের ছিলনা কোন দূরদর্শিতা। তারা ব্যর্থ হয় ইহুদীদের প্রাথমিক আগমনকে বন্ধ করতে। ১৯১৮ সালে ফিলিস্তীনে ইহুদীদের সংখ্যা ছিল ২০ হাজার। ১৯২৩ সালের মধ্যে ব্রিটিশদের সহযোগিতায় ইহুদীদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে ৩৫ হাজারে পৌঁছে। ইহুদীরা দ্রুত সংগঠিত হতে থাকে,  উৎপাদন বাড়াতে থাকে। এ সময় পাশ্চাত্যের পুঁজিপতিরা ইহুদিদেরকে অর্থ সাহায্য দেয়া শুরু করে।

গুপ্ত বাহিনী হাগানাহ
১৯১৮ সালেই ইহুদীরা গুপ্ত বাহিনী হাগানাহ গঠন করে। ব্রিটিশরা তাদের সাহায্য করে এই গুপ্ত বাহিনী গঠনে। ফিলিস্তীনিদের বাড়িঘর ও ক্ষেতখামার দখল করা, বাজার ও রাস্তাঘাটসহ জনসমাবেশস্থলে বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ফিলিস্তীনিদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করা এবং ফিলিস্তীনি নেতাদের গুপ্তহত্যা ছিল হাগানাহ বাহিনী দায়িত্ব। আস্তে আস্তে হাগানাহ শক্তিশালী হতে থাকে, অপকর্ম বাড়াতে থাকে। ফিলিস্তীনিরা জমি হারাতে থাকে, ইহুদীরা জমি দখল করতে থাকে।  ১৯৪৮ সালের মধ্যে এ এলাকায় ইহুদীদের সংখ্যা ৬ লাখে এসে দাড়ায়।

ইসরাইলের পথচলা শুরু ১৯৪৮ সালে
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জাতিসংঘ মার্কিন ও ব্রিটেনের চক্রান্তের অংশ হয়ে ফিলিস্তীনকে সবচেয়ে বড় দাগাটা দেয়। ফিলিস্তিন ভূখণ্ডটি একচ্ছত্র মুসলমানদের এলাকা হলেও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরপর, ১৯৪৭ সালে, জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ ফিলিস্তিনী ভূখণ্ডকে দ্বিখণ্ডিত করা সংক্রান্ত ১৮১ নং প্রস্তাব গ্রহণ করে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর মার্কিনেরা হয়ে যায় মুল শাসক। মার্কিন প্রভুর সুরে গান গেয়ে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ দ্বিখণ্ডিত করে দেয় ফিলিস্তিনী ভূখণ্ড। মুসলিম দেশগুলো কঠিন বিরোধিতা করে কিন্তু কোন লাভ হয় না। মুসলমানরা পায় ফিলিস্তীনের ৪৫ শতাংশ আর ইহুদীরা পায় ৫৫ শতাংশ। মুসলমানরা যে এলাকাটুকু পায় তাও ছিল দুই ভাগে বিভক্ত, যেন দু’টি দ্বীপ যার তিন দিকে ইহুদিরা। এই ফিলিস্তিনী ভূখণ্ডের ৫৫ শতাংশ নিয়ে শুরু হয় ইহুদী রাষ্ট্র ইসরাইলের পথচলা।  আমেরিকা ও সোভিয়েত ইউনিয়ন দ্রুত ইসরাইলকে স্বীকৃতি প্রদান করে। আরও স্বীকৃতি পেতে দেরী হয়না কারণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল ছোট দেশগুলোকে অনবরত চাপ দিতে থাকে জাতিসংঘে ইসরাইলের পক্ষে ভোট দেয়ার জন্য। মুসলিম দেশগুলো আবারও কূটনৈতিক ভাবে একত্রিত হতে ব্যর্থ হয়  ফলে সম্মিলিত চাপ প্রয়োগ করতে পারে না। জাতিসংঘ  ১৯৪৮ সালের ১৪ মে ইসরায়েলকে  স্বাধীনতা প্রদান করে। স্বাধীনতার পরপরই আরবদের সম্মিলিত বাহিনীর সাথে ইসরাইলের যুদ্ধ শুরু হয়। প্রায় পনেরো হাজার মানুষ এতে মারা যায়। ফিলিস্তীনের অধিকাংশ আরবরা ভিটেমাটি ছেড়ে শরনার্থী হিসেবে আশ্রয় নেয় জর্ডান, পশ্চিম তীর এবং গাজা উপত্যকায়। যুদ্ধে ইসরাইল জয়ী হয়ে ভূখণ্ডের বেশিরভাগ জায়গা নিজের দখলে রাখে। পশ্চিম তীর যায় জর্ডনের দখলে, গাজা উপত্যকা যায় মিশরের দখলে। পরে এই দুই ভূখণ্ড মিলিয়ে ফিলিস্তিনীকে ‘All Palestine Government’ নামে  স্বীকৃতি দেয় আরব লীগ।

১৯৪৯ থেকে শুরু হয় ইসরায়েলকে আরও অস্ত্র-শস্ত্রে সজ্জিত করা। এখানেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেন আগ্রনী ভুমিকা পালন করে। সাথে সাথে চলতে থাকে পাশ্চাত্যের পুঁজিপতিদের অর্থ জোগান। ইসরাইল একই সাথে অর্থনৈতিক ও সামরিক দিক দিয়ে শক্তিশালী হতে থাকে।


ধ্বংসজজ্ঞ ও হত্যা নিয়মিত হয়ে গেল
যে ফিলিস্তীনি ভূমি দখল করে ইসরাইল রাষ্ট্র গঠন হলো, অত্যন্ত সুচারুভাবে সেই ফিলিস্তীনের বাকি ভূমিগুলোকেও দখল শুরু করলো ইসরাইল। মিথ্যা প্রোপাগান্ডা চালিয়ে বিনা অপরাধে, বিনা উস্কানিতে হত্যা করতে লাগলো ফিলিস্তীনের মানুষদের। মাথামোটা আরব মুসলিম নেতারা চতুর ইহুদিদের কুটচালের কাছে বারবার বিপর্যস্ত হতে লাগলো। আর কিছু মুসলিম দেশ তো ততদিনে মার্কিনীদের  দাসে পরিণত হয়েছে। এর ফলে ফিলিস্তীনি মুসলমানরা হয়ে পড়ে একেবারে অসহায়। ফিলিস্তিনি মুসলমানদের প্রতিবাদ কে সন্ত্রাস হিশাবে আখ্যায়িত করে ইসরাইল চালাতে লাগলো আরও ধ্বংসজজ্ঞ ও হত্যা।

ফিলিস্তিনিরা ক্রমান্বয়ে হারাচ্ছে জমি

হামাস (হারাকাত আল-মুকাওয়ামা আল-ইসলামিয়া)
হামাসের মুল নিবিষ্টতা গেরিলা আক্রমন ও সঙ্ঘর্ষে থাকলেও তাদের আছে একটা রাজনৈতিক পরিচয়। ২০০৬ সালে ফিলিস্তীনে প্রথমবারের মত নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করেই হামাস অপ্রত্যাশিতভাবে জয়ী হয়। কিন্তু হামাসের নেতৃত্বাধীন সরকারকে পশ্চিমা দেশগুলো কখনও স্বীকৃতি দেয়নি৷ কূটনৈতিক প্রচেষ্টা না চালিয়ে হামাস বেছে নেয় সংঘাতের পথ। বর্তমান পরিস্থিতির জন্য অনেকাংশে হামাস দায়ী। পরিণতি চিন্তা না করে ইসরাইলের শক্তিশালী বাহিনীর সাথে যুদ্ধ বাধানো স্রেফ বোকামি। কষ্টভোগ করছে আর  মরছে সাধারণ মানুষ, হামাসের সৈন্যরা না। ক্ষেত্র বিশেষে মনে হয় হামাস বারবার ইসরাইয়েলকে সুযোগ করে দিচ্ছে গণহত্যা চালানোর। তবে পুরো ব্যপারটা যে ইসরাইয়েলের বৃহৎ পরিকল্পনার অংশ তা স্পষ্টবোঝা যায় কারণ ইয়াসির আরাফাতের সংঘটন পিএলওকে নাস্তানাবুদ করতেই হামাসের উত্থান হয়েছিল ১৯৮৭ সালে যাতে সহায়তা দিয়েছিলো  ইসরায়েল। উদ্দ্যেশ্য ছিল আরাফাতের সেক্যুলার ফাতাহ মুভমেন্টকে প্রতিহত করা।

বিজ্ঞানে, চিকিৎসায়, ব্যবসায়, ইহুদীদের রয়েছে শক্ত অবস্থান
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মদদ পুষ্ট ইসরাইল এখন বিশ্বের কোনও দেশকেই পাত্তা দেয়না যদিও এই মুহূর্তে একমাত্র ইরান ছাড়া আর কোন দেশই ফিলিস্তিনী মুসলমানদের পক্ষে জোরদার অবস্থানে নেই। সব মুসলিম দেশ পরিণত হয়েছে মার্কিনীদের তাবেদারে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সব বড় রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও নীতিনির্ধারক সংস্থায় ইহুদিদের প্রভাব ও কর্তৃত্ব রয়েছে। এসব ইহুদিরা মূলত আমেরিকা ও ইউরোপের বাসিন্দা। পৃথিবীর গুরুত্বপূর্ণ সব রাজধানী ও বাণিজ্যিক শহরে রয়েছে ইহুদিদের বিপুল সম্পত্তি; যেমন রাশিয়ার মস্কো ও যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনের উল্লেখযোগ্য এক অংশের মালিকানা ইহুদিদের। বিজ্ঞানে, চিকিৎসায়, ব্যবসায়, ইহুদীরা শক্ত অবস্থান করে নিয়েছে, তাই সুচারু ভাবে তাদের লক্ষ্য পূরণ করতে পারছে। গণহত্যা আর ভূমীদখলকে করে ফেলেছে ন্যায়সঙ্গত।

মার্কিন প্রশাসন ও সূরা হাশরের ১৪ নম্বর আয়াত
সাম্প্রতিক মার্কিন প্রেসিডেন্টগনের মধ্যে রোনাল্ড রিগ্যান,  রিচার্ড নিক্সন, জিমি কার্টার, বুশ সিনিয়র, বিল ক্লিনটন, বুশ জুনিয়র, বারাক ওবামা - এদের সবার প্রশাসন বাইবেলের এক  ভবিষ্যদ্বাণীতে বিশ্বাস করে এবং তার উপর ভিত্তি করে নীতি নির্ধারণ করে। তাদের ধারনা যে ভবিষ্যতের কোন একসময় ইহুদি-খ্রিষ্টান সম্মিলিত শক্তি যুদ্ধ করবে মুসলমানদের বিরুদ্ধে।  ইসরাইলের রাজধানী তেলআবিব থেকে ৫৫ মাইল উত্তরে ম্যাগোডো নামে একটি প্রান্তর রয়েছে, ভূমধ্যসাগর থেকে যার দূরত্ব ১৫ মাইল। মৌলবাদী খ্রিষ্টান ও ইহুদিদের বিশ্বাস এখানেই হবে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ। এজন্য ইহুদিরা স্বল্পমেয়াদি, মধ্যমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রণয়ন করছে। আর সেগুলো বাস্তবায়ন করছে পর্যায়ক্রমে। এই পরিকল্পনার একটি অংশ বিশাল দেয়াল নির্মাণ। এমন একটি ইঙ্গিত অবশ্য পাওয়া যায় কুরআনেও। সূরা হাশরের ১৪ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে ‘তারা সম্মিলিতভাবে তোমাদের সাথে লড়াই করবে শুধু সংরক্ষিত জনপদে কিংবা দেয়ালের পেছন থেকে।’

আগামী কি রকম হবে?
ফিলিস্তিনিদের উপর ইসরাইলের এই অত্যাচার কি চলতেই থাকবে? প্রায় ১০০ (৯৭) বছর ধরে চলছে এই আগ্রাসন। চলবে কি আরও ১০০ বছর? নাকি তারও বেশী? অত্যাচারের মাত্রা কি বেড়ে যাবে? না, তা হয়তো হবে না। বিশ্ব অর্থনীতির ক্রমাগত রুপান্তর আর বিশ্ব রাজনীতির নবলব্ধ মেরুকরুন আগামী বিশ বছরের মধ্যেই সবকিছু বদলে দিতে শুরু করবে। পৃথিবীর কর্নধার দেশগুলোকে নতুন করে হিসাব কষতে হবে। অর্থনৈতিক ভাবে শক্তিশালি দেশগুলো তাদের পররাষ্ট্রনীতি ঢেলে সাজাবে।  সে সময় ফিলিস্তিন যদি কূটনৈতিক ভাবে এগুতে পারে তাহলে সম্ভব এই অত্যাচার, অবিচার বন্ধ করা। একই সাথে প্রয়োজন হবে মুসলিম দেশগুলোর মার্কিন ও ব্রিটিশ দাসবৃত্তি থেকে বেরিয়ে এসে একত্রিত হওয়া।

তথ্য সুত্রঃ
Some truths behind the Israeli-Palestinian conflict

Conflicts in the Middle East

Israel/Palestine 101

What is really fueling the Israeli-Palestinian conflict?

Hundreds of French Jews Immigrate To Israel During Gaza Offensive

Comments

Unknown said…
হামাসের মুল নিবিষ্টতা গেরিলা আক্রমন ও সঙ্ঘর্ষে থাকলেও তাদের আছে একটা রাজনৈতিক পরিচয়। ২০০৬ সালে ফিলিস্তীনে প্রথমবারের মত নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করেই হামাস অপ্রত্যাশিতভাবে জয়ী হয়। কিন্তু হামাসের নেতৃত্বাধীন সরকারকে পশ্চিমা দেশগুলো কখনও স্বীকৃতি দেয়নি৷ কূটনৈতিক প্রচেষ্টা না চালিয়ে হামাস বেছে নেয় সংঘাতের পথ। বর্তমান পরিস্থিতির জন্য অনেকাংশে হামাস দায়ী। পরিণতি চিন্তা না করে ইসরাইলের শক্তিশালী বাহিনীর সাথে যুদ্ধ বাধানো স্রেফ বোকামি। কষ্টভোগ করছে আর মরছে সাধারণ মানুষ, হামাসের সৈন্যরা না। ক্ষেত্র বিশেষে মনে হয় হামাস বারবার ইসরাইয়েলকে সুযোগ করে দিচ্ছে গণহত্যা চালানোর। তবে পুরো ব্যপারটা যে ইসরাইয়েলের বৃহৎ পরিকল্পনার অংশ তা স্পষ্টবোঝা যায় কারণ ইয়াসির আরাফাতের সংঘটন পিএলওকে নাস্তানাবুদ করতেই হামাসের উত্থান হয়েছিল ১৯৮৭ সালে যাতে সহায়তা দিয়েছিলো ইসরায়েল। উদ্দ্যেশ্য ছিল আরাফাতের সেক্যুলার ফাতাহ মুভমেন্টকে প্রতিহত করা।


Eitar dara ki apni bujhate chassen Hamas jongi gosthi tader jihadi totporotai kono lav hobe na borong islam theke dure fatah er secularism diyei filistini jonota kutnoitik chale mukti pabe?

Popular posts from this blog

Dhaka in the 1950s and 1960s

In the mid 1950s, Dhaka, known as ‘Dacca’ at that time, was just a small provincial town with about 3,00,000 inhabitants. Dhanmondi at that time just started to grow; Maulvi Abdus Sobhan's family had some habitation in Sobhanbagh, Dhaka Stadium was being constructed to host cricket matches and New Market was starting to become a busy shopping area. Dhaka residents loved cinema since the time it was introduced. Baliadi Siddiki family owned Nishat Cinema Hall and held a mega event when the film ‘Aan’ by Mehboob Khan was released in 1952. Elephants were used by the hall owner to distribute leaflets and to spray colour water. There was another prominent hall named Britannia near Rex Restaurant at Gulistan but was closed down in the late 1950s. Gulistan Cinema Hall, city’s first modernity landmark, came up in 1952. Amber, started with Raj Kapoor and Nargis, was the first film the hall showed. Mukul which later became 'Azad 'used to show Bengali films from Kolkat...

সুন্দর পশু-পাখি, সুন্দর গাছ আর সুন্দর সুন্দর জঙ্গল নিয়ে সুন্দরবন

...প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় এদেশের মানুষের পক্ষ হয়ে বর্ম হিসেবে দাড়িয়ে যাওয়া সুন্দরবনের সাথে বেশীর ভাগ মানুষের প্রথম পরিচয় হয় বাংলা ১ম পত্রের গদ্য বইয়ে অথবা বাংলা ২য় পত্রের রচনায়। সুন্দরবন - এর আক্ষরিক অর্থ 'সুন্দর জঙ্গল' অথবা 'সুন্দর বনভূমি' কিন্তু নামকরণ হয়েছিল 'সুন্দরী গাছ' থেকে যা এখানে প্রচুর পরিমানে জন্মে। তবে যেহেতু স্থানীয় আদিবাসীরা অনেক আগে থেকে বনটিকে ‘চন্দ্র-বান্ধে’ নামে ডাকতো তাই হতে পারে ‘চন্দ্র-বান্ধে’ নামটি কালের পরিক্রমায় ‘সুন্দরবন’ হয়ে গেছে। বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেষে অবস্থিত এই বনের বাঘ ‘রয়েল বেঙ্গল টাইগার’ নামে পরিচিত যদিও সংখ্যায় এখন এ প্রাণী ক্রমনিম্নগামী। সুন্দরবন সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকায় অবস্থিত হবার কারনে এখানকার পানি নোনতা এবং এই লবণাক্ততার কারণে বাঘ অস্বস্তিকর অবস্থায় থাকে যা তাদের বেশ আগ্রাসী করে তোলে তাই  মাছ ও মধু সংগ্রহকারী মানুষদের উপর সুযোগ পেলে তারা ঝাপিয়ে পরে। ১৭৫৭ সালে পুরো বাংলার ইজারা নেয় বৃটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি যার মধ্যে সুন্দরবনও ছিল। এই বনের গুরুত্ব বুঝতে পেরে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি একটা মানচিত্র তৈরি করে সেইসময়...

Comparing current Dhaka with its past

...In late 1950s, the Adamjee group of Industries, which was one of the most significant companies in the country of that time, built an extremely modern air conditioned office-complex in Motijheel - Dilkusha area and named it Adamji Court Building. It was the first building in the city with a lift installed. The US government rented a floor in the building and housed their consular office. Hotel Purbani, located at 1 Dilkusha Commercial Area, was build in 1964 and became the most prominent hotel of that time. S.A.Sobhan, the then Additional Chief Secretary of the government and a silent advisor of Awami League in the later years, initiated the venture. Shortly A Sattar, owner of a 7-up bottling factory, joined the project. Name of the hotel was given by Bangabandhu Sheikh Mujibur Rahman as owners were quite close to him. Elites of  the city and foreigners found the hotel a good place to be. The buffet lunch at one of the restaurants of the hotel were offered at Rs. (Pak...